খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৬ ভাদ্র ১৪৩২

জোরালো হচ্ছে ‘ব্লক এভরিথিং’ আন্দোলন

এবার ফ্রান্সে সরকার বিরোধী তীব্র বিক্ষোভ, নিয়ন্ত্রণে আটক ২ শতাধিক

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৭ এ.এম | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫


অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় থাকা ফ্রান্সে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানী প্যারিসসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে এ আন্দোলন চলছে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২ শতাধিক লোককে আটক করে পুলিশ। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে অন্তত ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বুধবার ‘ব্লোকঁ তু’ কর্মসূচি পালন করেছেন হাজারো তরুণ। ফরাসি ভাষায় ‘ব্লোকঁ তু’ অর্থ সবকিছু অচল বা বন্ধ করে দেওয়া। বিক্ষোভ শুরুর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তাদের আটক করা হয়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লো মঁদ।
লো মঁদ জানায়, বুধবার হাজারো বিক্ষোভকারী রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করেন। তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমনে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ দমনে ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মূলত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্ব এবং কঠোর নীতির জন্য ক্ষুব্ধ জনতা অনলাইনে বিক্ষোভ আহŸানের পর হাজার হাজার জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা দেশজুড়ে স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
সংসদীয় আস্থা ভোটে ফ্রাঁসোয়া বেয়রোকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ এবং সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে নতুন প্রধানমন্ত্রী করার দুই দিন পর ‘ব্লক এভরিথিং’ নামের এই আন্দোলন ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
বুধবার কমপক্ষে ৮০টি স্থানে বিক্ষোভ এবং ১৬টি স্থানে অবরোধ করা হয়। প্যারিসসহ রেনেস, ন্যান্টেস, গ্রেনোবল, লিয়ন, লিল, কেন এবং তুলুসের মতো প্রধান শহরগুলোতে প্রতিবাদের তীব্রতা দেখা যায়।
একটি শহরে আন্দোলনের প্রথম দিকে উত্তেজিত জনতা আবর্জনার ক্যান ভেঙে ফেলে এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। প্যারিসের একটি রেল স্টেশনের কাছে বিক্ষোভকারীরা সরাসরি পুলিশের মুখোমুখি হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হওয়া ক্ষোভের মধ্যে ১০ সেপ্টেম্বর নাগরিকদের ‘সবকিছু ব্লক’ করার আহŸান জানানো হয়। এর লক্ষ্য ছিল বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেয়ারুর জাতীয় বাজেট পরিকল্পনার বিরোধিতা করে দেশকে থামিয়ে দেওয়া।
অতি-বামপন্থী ফ্রান্স আনবোউড (এলএফআই) দলের সমর্থনে আন্দোলন গতি লাভ করে। এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয় একটি ছোট অনলাইন গ্র“প ‘লেস এসেনটিয়েলস’ থেকে। সেখানে এক পোস্টে বলা হয়, ‘১০ সেপ্টেম্বর আমরা সবকিছু বন্ধ করে দেব, পালানোর জন্য নয়, না বলার জন্য নয়।’
ইতোমধ্যে ফরাসি ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলো সরকারের বাজেট প্রস্তাবের প্রতিবাদে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে এক সমাবেশ দিবসের ডাক দিয়েছে।
এরই মাঝে গত সোমবার জাতীয় পরিষদে আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী হেরে যাওয়ার পর দেশটি ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মুখোমুখি। দেশটির বাজেট ঘাটতি ইইউ'র অন্যতম বৃহত্তম, অর্থাৎ ৫.৮%। ফরাসি বর্তমান রানৈতিক উত্তেজনায় বাজেট আলোচনা একটি প্রধান ‘স্ফুলিং’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্র“নো রেতাইয়ো বলেছেন, সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে এমন বিক্ষোভ করা হচ্ছে। বুধবার বিক্ষোভ শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রেনে-তে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি রেললাইনে বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্র“নোর অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।
রেতাইয়ো আরও বলেন, মূলত অনলাইনে সরকারবিরোধীরা সংঘবদ্ধ হন। কিছু বামপন্থি রাজনীতিবিদ তাদের সমর্থন দিচ্ছেন। তারা ফ্রান্সে একটি বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। বুধবার কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর মানসিকতা নিয়েই রাস্তায় নেমেছে।
লো মঁদ বলছে, কোনো সুনির্দিষ্ট নেতৃত্ব ছাড়াই এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা মাখোঁ প্রশাসনের বাজেটে ব্যয় সংকোচনের বিরোধিতা করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতের বৈষম্যেরও বিরোধিতা করছেন।
এএফপির তথ্যমতে, প্রেসিডেন্ট মাখোঁর ব্যয় সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ শুরু করেছে বামপন্থিরা। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) পদত্যাগ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফ্রঁসোয়া বায়রু। এরপরই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেবাস্টিয়ান লোকনুর নাম ঘোষণা করেন মাখোঁ। বুধবার তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। এদিনই বিক্ষোভ শুরু হলো।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মাখোঁর উচিত ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া। অথবা একজন বামপন্থি নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা। কিন্তু তিনি তারই এক ঘনিষ্ঠজনকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। এটি হতাশাজনক।

্রিন্ট

আরও সংবদ