খুলনা | শুক্রবার | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৭ ভাদ্র ১৪৩২

চারটি আসন পুনর্বহালের দাবিতে উত্তপ্ত বাগেরহাট

সোমবার থেকে টানা তিনদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল রোববার সরকারি অফিস-আদালত ঘেরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট |
০১:০৩ এ.এম | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫


বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা ৪৮ ঘন্টার হরতাল ৩৬ ঘন্টায় শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জরুরী সভায় সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির কো-কনভেনর ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম এ সালাম হরতাল সমাপ্তের ঘোষণা দেন। সাথে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, রোববার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি অফিস-আদালতে অবস্থান কর্মসূচি। সোম, মঙ্গল ও বুধবার টানা তিন দিন প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হবে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। 
ঘোষণার সময়, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস আলী, জামায়াতের যুব বিভাগের প্রধান শেখ মঞ্জুরুল হক রাহাত, বিএনপি নেতা সর্দার লিয়াকত আলীসহ সর্বদলীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তবে হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, নির্বাচন অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালাসহ নানা কর্মসূচির পরেও নির্বাচন কমিশনের টনক নড়েনি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বাগেরহাটে আন্দোলনকারী কারও সাথে যোগাযোগ করা হয়নি।
সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির কো-কনভেনর ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি। দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করেছি। তারপরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। আমরা নতুন করে কর্মসূচি ঘোষনা করেছি। যদি নির্বাচন কমিশন আমাদের আসন ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এছাড়া আসন ফিরে পেতে আগামী সপ্তাহে উচ্চ আদালতে রিট করার ঘোষণা দেন তিনি।
যেভাবে শেষ হলো ৩৬ ঘন্টার হরতাল: সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, সভা, প্রতিবাদ সভা, সরকারি অফিসে তালা দেওয়াসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই হরতাল শেষ হয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে সড়ক অবরোধের মধ্য দিয়ে শুরু হয় হরতাল। এরপর একে একে বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেন নেতা-কর্মীরা। হরতাল বলবৎ থাকে এদিন রাতেও। রাত দিন মিলে ২৪ ঘন্টা যানবাহন না চলায় বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, স্টান্ডের পশ্চিম পাশের সড়ক, দড়াটানা সেতুর পূর্বপাশের সড়ক, কাটাখালি মোড়, নওয়াপাড়া মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে মালবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়। জেলার বিভিন্ন সড়কের অন্তত ১৩৪টি স্থানে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছিলেন নেতা-কর্মী ও স্থানীয়রা। যার ফলে বাগেরহাট জেলা কার্যত অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এমনকি আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থাও এক কথায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জরুরী প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রী ও পথচারীরা। ভোগান্তির পাশাপাশি গন্তব্যে পৌঁছাতে গুণতে হয়েছে কয়েকগুণ টাকা।
বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের সামনে দিয়ে রায়েন্দা যাওয়ার উদ্দেশ্যে হেঁটে দড়াটানা সেতুর দিকে যাচ্ছিলেন তানিয়া ও তার স্বামী এনামুল গাজী। তারা জানান, চট্টগ্রাম থেকে আসছি কাটাখালি নামিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে কি ধরনের ভোগান্তি করে এখানে আসছি তা বোঝানো যাবে না। এছাড়া ৭শ’ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে কাটাখালি থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসতে। তানিয়া ও এনামুল গাজীর মত অনেককেই এভাবে কখনও হেঁটে, কখনও ভ্যানে আবার কখনও ইজিবাইকে নিজের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে রাতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মালবাহী ট্রাক থেকে পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের একাধিক স্থানে চাঁদাবাজী করা হয়েছে। ট্রাক চালকদের কাঙ্খিত গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার নামে নেওয়া হয়েছে টাকা।
দড়াটানা সেতুর পাশে ট্রাক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চালক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, রাতে পিরোজপুর থেকে আসছি। ব্রিজের পূর্ব পাড়ে আমাদের আটকায়। পড়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে ২০০ করে টাকা নেয়। কিন্তু সেতু পাড় হওয়ার পর আবারও আমাদের আটকে দেয়। এখানে প্রায় ২০ ঘন্টার বেশি আটকে আছি। শুধু সেতুর পূর্ব পাড় নয়, কাটাখালি, নওয়াপাড়া, মোল­াহাট আবুল খায়ের সেতুসহ আরও কয়েকটি স্থানে গাড়ি চালকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হরতালের সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে। তবে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির কোন নেতা এর সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন তারা।

্রিন্ট

আরও সংবদ