খুলনা | শুক্রবার | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৭ ভাদ্র ১৪৩২

নগরীর শিপইয়ার্ড সড়ক প্রকল্পে অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদকের অভিযান, মিলেছে অভিযোগের সত্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৪ এ.এম | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫


জনদুর্ভোগ তৈরি করে উল্টো ৬০ কোটি ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টার সংবাদ প্রকাশের পর খুলনার শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রকৌশল টিম সড়কের মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন উপকরণ পরীক্ষা করে। সেখানে সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন স্তরে যেসব উপকরণ থাকার কথা, তা পাওয়া যায়নি। তারপরও সেগুলো পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স এবং কেডিএ’র প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি আধা-সমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কেডিএ ২০১৩ সালের ৭ মে একনেকে তিন দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি ৪ লেনে প্রশস্ত করতে অনুমোদন পায়। শুরুতে এর ব্যয় ছিল ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৯ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান লিমিটেড অ্যান্ড মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডকে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কার্যাদেশ দেয় কেডিএ। 
চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক কাজও হয়নি। কিন্তু ৭০ কোটি টাকার বিল তুলে নেন ঠিকাদার। কাজ ফেলে রেখে জনভোগান্তি তৈরির কারণে গত ৭ আগস্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে কেডিএ। তখন উল্টো কেডিএ’র বিরুদ্ধে মামলা এবং ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনি পদক্ষেপ নেয় মাহাবুব ব্রাদার্স। জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়, যাতে সড়ক নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হয়। গতকাল দুপুরেই প্রকৌশল টিম নিয়ে সড়কে অভিযান শুরু করে দুদক।
দুদক খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, শিপইয়ার্ড সড়ক নির্মাণে অনিয়ম, কাজ ফেলে জনভোগান্তি তৈরি এবং কেডিএ ও ঠিকাদারের যোগসাজশে ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে আমরা সরেজমিন পরীক্ষা করছি।
তিনি বলেন, ৩ দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কের শেষ ৩০০ মিটার পরীক্ষা করেছি। সেখানে পুরো কাজ হয়েছে বলে কেডিএ’র মেজরমেন্ট বইতে উল্লেখ করেছে। সড়কের ওই অংশে ১০ ইঞ্চি বালুর স্তর, তার উপর ১০ ইঞ্চি সাববেজে, ৭০ শতাংশ ইটের খোয়া এবং ৩০ শতাংশ বালুর মিশ্রণ থাকার কথা। কিন্তু কয়েকটি স্থানে মাটি খুঁড়ে কিছুই পাওয়া যায়নি। অথচ এসব অংশের বিল তুলেছেন ঠিকাদার।
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আমাদের নিয়োগ করা প্রকৌশলীরা বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, কেডিএ কার্যালয় থেকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র, ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের রশিদ ও অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। কাগজের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক ফারাক রয়েছে।
এ বিষয়ে কেডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আরমান হোসেন বলেন, শেষ ৩০০ মিটারে কাজ শেষ হয়নি। বাকি সাড়ে ৩ কিলোমিটার ঠিক রয়েছে। তারা শেষ অংশেই সব পরীক্ষা করছে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ