খুলনা | শুক্রবার | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৭ ভাদ্র ১৪৩২

খুলনাকে শান্তি ও স্বস্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য : ফিরোজ সরকার

কেসিসির ৭শ’ ১৯ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার বাজেট, নেই নতুন কর আরোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৬ এ.এম | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫


খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৭শ’ ১৯ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসি প্রশাসক মোঃ ফিরোজ সরকার বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগর ভবনের শহিদ আলতাফ মিলনায়তনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন।
প্রস্তাবিত এ বাজেটে রাজস্ব তহবিলের সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে (স্থিতিসহ) ৪৫৫ কোটি ৯৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে সরকারি অনুদান (দ্বিতীয় অংশে) ধরা হয়েছে ১৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। উন্নয়ন তহবিল বিশেষ প্রকল্পে ১৩৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৬৫ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮১ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৬১৮ কোটি ২৫ লাখ সাত হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৬২.৯৬ শতাংশ। 
স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং জুলাই আন্দোলনে শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কেসিসি প্রশাসক বলেন, বাজেট কোন প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান নয় বরং এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ভাবনা প্রতিফলিত হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটও সেই ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। খুলনাকে একটি শান্তি ও স্বস্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এর জন্য নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
বাজেটের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে প্রশাসক বলেন, এটি একটি উন্নয়নমুখী বাজেট। নতুন কোন কর আরোপ না করে বকেয়া পৌরকর আদায়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া নবনির্মিত স্থাপনার উপর প্রচলিত নিয়মে পৌরকর ধার্য্য, মার্কেট, দোকান, নতুন স্থাপনা নির্মাণ ও পার্কগুলিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে নিজস্ব আয়ের স¤প্রসারণ করাই আমাদের লক্ষ্য। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা স¤প্রসারণসহ স্থাপনাসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের ওপর এ বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেসিসি’র দাপ্তরিক কার্যক্রমের আধুনিকায়নসহ ধর্মীয় উপসনালয়ের উন্নয়ন এ বাজেটে নেয়া হয়েছে।  একই সাথে বাজেটে আগস্ট-২০২৪ ও তার পূর্বের শহিদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। 
বাজেটের সফল বাস্তবায়নে তিনি সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকের পরিপূর্ণ আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। 
বাজেট বর্ণনায় কেসিসি প্রশাসক বলেন, মাস্টার রোল ও আউটসোসিং কর্মকর্তা কর্মচারী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন ভাতা, নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে নিজস্ব তহবিল হতে উন্নয়ন খাতে ১১৪ কোটি ৮৯ লক্ষ ০৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্য পূর্তখাত, বিএমডিএফ, অবকাঠামো তৈরি, সড়কবাতি, শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজ কল্যাণ, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, ভেটেরিনারি ও কঞ্জারভেন্সি, উন্নয়ন খাতে ১০০ কোটি ২৩ লক্ষ ০৫ হাজার টাকা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ১৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা এবং মূলধন খাতে ৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি),  থোক ও বিশেষ বরাদ্দে চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দ থেকে পূর্ত খাতে ২৩ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা, জরুরি পানি চাহিদা খাতে ৭০ লক্ষ টাকা, ভেটেরিনারী খাতে ৭০ লক্ষ টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ৮ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা এবং কঞ্জারভেন্সি খাতে ২১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে ২টি প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা চলতি বছরে পাওয়া যাবে। 
চলমান প্রকল্প সমূহের বিবরণ তুলে ধরে কেসিসি প্রশাসক বলেন, খুলনা মহানগরীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ৮শ’ ২৩ কোটি ৭৯ লক্ষ ০৬ হাজার টাকার মধ্যে চলতি অর্থবছরে পাওয়া যাবে ২০ কেটি টাকা। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩শ’ ৯৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা যার মধ্যে চলতি অর্থবছরে পাওয়া যাবে ৫৫ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা।  খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হয়েছে এবং ১৫শ’ কোটি টাকার খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। 
কেসিসি প্রশাসক আরও বলেন দাতা সংস্থা বিশ^ ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিল এন্ড এএমপি মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সহযোগিতা করছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন দাতা সংস্থার মাধ্যমে ১১টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ সকল প্রকল্পে ১শ’ ৩৩ কোটি ১৮ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা শিগগিরই পাওয়া যাবে বরে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পগুলির মধ্যে নগর অঞ্চল প্রকল্প-২ এ ৪ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, হেলদি সিটি খুলনা আরবান লিড প্রোগ্রামে ১৫ লাখ টাকা, সাসটেইনেবল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং টু রিভিউস ইরিভারসিভেল পপুলেশন বাই প্লাস্টিক প্রকল্পে ৭০ লাখ, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পে ৬ কোটি টাকা, ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ এডাপটেশন আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প-২ এ ৬০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, সাসটেইনেবল আরবান ওয়াটার সাইকেল প্রকল্পে ৭২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা, ইন্টিগ্রেটি ফর ট্রান্সমিট থ্রো ইউথ কাউন্সিল প্রকল্পে এক কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্মার্ট ওয়াশ ইনিশিয়েটিভ বাই ইউনিসেফ প্রকল্পে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবনমান বৃদ্ধি প্রকল্পে ২৫ লাখ টাকা ও লিভেবল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ সিটিস প্রকল্পে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় এডিপিভুক্ত দুইটি প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। 
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। বাজেটে এসব প্রকল্পে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। 
একই সাথে তিনি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ৬শ’ ১৮ কোটি ২৫ লক্ষ ৭ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও পেশ করেন। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪শ’ ৫৫ কোটি ৯৩ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা এবং ব্যয় ধরা হয়েছে ২শ’ ৭৭ কোটি ৬৫ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১শ’ ৩০ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা এবং বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১শ’ ৩৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটি শেষ হওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ কম হয়েছে বলে উলে­খ করা হয়। 
কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শরীফ আসিফ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাজেট কাম একাউন্টস অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান। 
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এড. শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সাবেক কাউন্সিলর মোঃ হাফিজুর রহমান মনি, বৃহত্তর খুলনা উনয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, নাগরিক ফোরাম-খুলনার মহাসচিব ইকবাল হাসান তুহিন, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসীর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খোকন, জুলাই শহিদ শেখ মোঃ সাকিব রায়হানের পিতা শেখ মোঃ আজিজুর রহমানসহ সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি, নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী ও কেসিসি কর্মকর্তাগণ বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ