খুলনা | রবিবার | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন : দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতেই হবে

|
১১:৩৩ পি.এম | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫


গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশজুড়ে যে আকাক্সক্ষাটি সবচেয়ে জোরালো হয়, সেটি হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। সেই লক্ষে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় ইতিমধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। কিন্তু সেই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়েই একমত হতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলো।
অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। আগামী বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার, ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সংস্কার কার্যক্রম এবং বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখতে চায় দেশের জনগণ। ফলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হতেই হবে। 
আমাদের মনে রাখতে হবে, জুলাই সনদ নিছক কোনো দলিল নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থান সফলকারী এ দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবি। এ সনদ একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক সমাজ গঠনের প্রতিশ্র“তি দেয়, যা দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসনের পর বাংলাদেশের জনগণের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে এ সনদ বাস্তবায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। 
কিন্তু বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মতো প্রধান দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। বিএনপি মনে করে, সংবিধান-সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো কেবল আগামী সংসদ ছাড়া বাস্তবায়নের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তাদের মতে, এখনই বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে তা কার্যকর করার চেষ্টা করলে দেশে দু’টি সংবিধান চালু হওয়ার মতো এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি মনে করে, জনগণের বিপ্লবকে সফল করতে হলে নির্বাচনের আগেই এই সংস্কারগুলো কার্যকর করতে হবে। তারা রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ, গণভোট বা গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে চায়। তাদের যুক্তি হলো, যদি সংস্কারের দায়িত্ব পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে এই গণ-অভ্যুত্থান অর্থহীন হয়ে পড়বে এবং স্বার্থান্বেষী পক্ষগুলো রাষ্ট্রকে আবার বিপদে ফেলতে পারে।
এই মতবিরোধ থেকে বোঝা যায়, দলগুলো একটি ‘ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন’-এর গুরুত্ব উপলব্ধি করলেও, তারা নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি নয়। এই অনড় অবস্থান জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। প্রশ্ন হলো, যদি এই দলগুলো সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে না পারে, তাহলে কীভাবে তারা একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে কাজ করবে?
তবে আশার কথা হলো, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ফলে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যেসব সংস্কার সম্ভব, সেগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু মূল সমস্যাটি রয়ে গেছে সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কারগুলো নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও নমনীয় হতে হবে। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি মধ্যপন্থা খুঁজে বের করা জরুরি। এই মতবিরোধের কারণে যদি সংস্কারপ্রক্রিয়া আটকে যায়, তাহলে জনগণের আস্থা ভেঙে যাবে। দেশের রাজনীতিতে আবারও একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আশা থাকবে, শুধু নিজেদের দলীয় স্বার্থ না দেখে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তারা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আর সেটি করতে হবে নির্বাচনের সময়সীমা মাথায় রেখেই। ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত পোষণ করেছে। জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি আছে। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ