খুলনা | রবিবার | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

কোস্টগার্ড ও বনরক্ষীদের উদ্ধার চেষ্টা

ঢাকা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে এসে স্রোতে ভেসে গেল মাদ্রাসার হাফেজ ছাত্র

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি |
১২:১৭ এ.এম | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫


বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ভ্রমণে এসে নদীর স্রোতে ভেসে গেছে এক কিশোর। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্যের ডিমের চরে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ কিশোরের নাম মাহিত আব্দুল­¬াহ (১৫)। তার বাবার নাম ডাঃ শেখ সুলতান মাহামুদ আসাদ, তিনি ঢাকার মীরপুর ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকার মহাম্মদপুর শেখেরটেকের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। 
এদিকে দুর্ঘটনার পর আনন্দ ভ্রমণ মুহূর্তেই শোকে পরিণত হয়। সঙ্গে সঙ্গে পর্যটক দলের সদস্যরা নদীতে নেমে খোঁজাখুঁজি করেও ভেসে যাওয়া কিশোরের কোনো সন্ধান পাননি। পরবর্তীতে খবর পেয়ে কচিখালী কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। দুপুর ২টার দিকে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলা সদরদপ্তর থেকে ৬ সদস্যের একটি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড। 
প্রত্যক্ষদর্শী পর্যটক দলের এক সদস্য মোঃ আল আমীন ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকার পোস্তগোলা রোরো ফেরিঘাট থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ৭৫ জন পর্যটক নিয়ে আমাদের এম ভি দ্য এক্সপে¬ারার নামের জাহাজটি সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আমাদের দলে ডাঃ সুলতান মাহামুদের স্ত্রী, চার ছেলে এবং তার ভাইয়ের পরিবারও ছিলেন। জাহাজটি শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে শরণখোলা স্টেশনে পৌঁছে বনবিভাগের অনুমতিপত্র নিয়ে কটকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথিমধ্যে কচিখালী অভয়ারণ্যে রাত্রিযাপন করে সকালে সবাই ডিমের চরে নামি। অনেকেই ডিমের চরের নদীতে নেমে সাঁতার কাটছিলেন। এদের মধ্যে ডাঃ সুলতান মাহমুদ তার চার ছেলেকে নিয়ে নদীতে নেমে আনন্দ-উল­¬াস করার সময় হঠাৎ জোয়ার চলে আসে। এ সময় জোয়ারের প্রবল স্রোতে হাফেজ আব্দুল­¬াহ চোখের সামনেই ভেসে যায়। মুহূর্তেই তাদের সব আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়ে যায়। পর্যটক আল আমীন আরো বলেন, সন্তান হারিয়ে ডিমের চরে মুর্ছা যাচ্ছেন বাবা, মা, তিন ভাই ও পরিবারের সদস্যা। মর্মান্তিক এই ঘটনায় পর্যটক দলের সবার মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। 
নিখোঁজ আব্দুল­¬াহর বাবা ডাঃ সুলতান মাহামুদ আসাদ মোবাইল ফোনে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, চার ছেলেকে নিয়ে নদীতে নামি। আমার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা কূলে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। ছেলেরা কেউ হাটু পানি কেউ গলা পানিতে নেমে আনন্দ করছিলো। এ সময় হঠাৎ নদীর একটি ঘূর্ণি ঢেউ এসে আমাদের সবাইকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো। তখন আমাদের চিৎকার শুনে দ্রুত লোকজন এসে গামছা ফেলে। সেই গামছা ধরে আমিসহ তিন ছেলে উঠতে পারলেও আমার মেজো ছেলেটি তলিয়ে যায়। 
ডাঃ মাহবুব বলেন, মানসিক প্রশান্তি আর আনন্দ উপভোগ করার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দরবনে এসেছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দ আমার কপালে সইলো না। আমার ছেলেটি কোরআনের হাফেজ। ছেলেটি নারায়ণগঞ্জের জামিয়াতুননূর আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার আলিমে পড়তো।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান, সরাসরি ঢাকা থেকে আসা পর্যটকবাহী জাহাজটি শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে শরণখোলা স্টেশন ঘাটে পৌঁছায়। জাহাজে ৭৫ জন সদস্য ছিলেন। তারা স্টেশন থেকে পাস নিয়ে কটকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা কচিখালীতে রাত্রিযাপন করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা ডিমের চরে নেমে সবাই যে যার মতো আনন্দ উপভোগ করছিলেন। এদের মধ্য থেকে একটি ছেলে স্রোতে ভেসে যায়।
তিনি বলেন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কচিখালী কন্টিনজেন্টের কোস্টগার্ড এবং অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। ঘটনাস্থলে জাল ফেলে ঘিরে রাখা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনে সকল স্টেশন ও জেলেদের কিশোর নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে বনরক্ষীদের একটি টিম ডিমের চরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও), কোস্টগার্ড মোংলা সদর দপ্তর ও নৌবাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা। এব্যাপারে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলা সদরদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন দুর্ঘটার খবর পেয়ে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ডুবুরিসহ ৬ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়ে গেছে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ