খুলনা | সোমবার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

একাদশে ভর্তিতে অনিয়ম : কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার জরুরি

|
১১:৩৪ পি.এম | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল। এরপরও যদি একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে কোটার অপব্যবহারের কারণে যোগ্যতা থাকার পরও শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত হতে হয়, তার থেকে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে। কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও স¤প্রতি কোটাব্যবস্থার অপব্যবহারের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন ও সংস্কার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে দুই ধরনের শিক্ষা কোটা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনে আবেদন করার সময় প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিতে না হওয়ার কারণে এক কোটার শিক্ষার্থীরা অন্য কোটায় আবেদন করে নির্বাচিত হয়েছে। ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-১) এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সরকারি স্কুল-কলেজ ও কার্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আরও ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-২) রাখা হয়েছে।
গণমাধ্যমের খবর জানাচ্ছে, শিক্ষা কোটা-২-এর জন্য যোগ্য অনেকে শিক্ষা কোটা-১-এ আবেদন করেছের। এবার এই কোটায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ২ হাজার ৭৭ জন। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাত্র কয়েকজনের সন্তান এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। আর শিক্ষা কোটা-২-এর অধীন ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১ হাজার ২৯৪ জন। একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে এই ২ শতাংশ কোটার বাইরে আরও ৫ শতাংশ কোটা আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। এই কোটার ক্ষেত্রে পুত্র-কন্যাদের পাওয়া না গেলে ওই আসনে মেধা তালিকা থেকে ভর্তি করা হয়। এ বছর এই কোটায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ জন।
একটি রাষ্ট্রে অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জাতি, গোষ্ঠী ও স¤প্রদায়কে সমাজের মূল স্রোতে এগিয়ে আনার জন্য কোটা সংরক্ষণ জরুরি। কিন্তু সমাজে যারা এরই মধ্যে অগ্রসর, তাদের জন্য কোটাব্যবস্থা চালু রাখা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। আবার ব্যবস্থাগত ত্র“টি বা ভুলের কারণে কোটার অপব্যবহার বা অনিয়মের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অভিভাবকেরা বলছেন, মেধা ও প্রতিযোগিতার জায়গায় কোটাব্যবস্থা থাকায় প্রকৃত যোগ্য অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে। কোটার কারণে বেশি নম্বর পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী কাক্সিক্ষত কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। কোটার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দকার এহসানুল কবির বলেছেন, এবার ভর্তির পর বিষটি যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বুয়েটকে কারিগরি দিক যাচাই করে তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, কোটা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু অনিয়ম দূর করাটাই এখানে শেষ করণীয় নয়। সামগ্রিকভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে যে ৭ শতাংশ কোটা চালু রয়েছে, তার পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময়েও দেখা গেছে, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। দাবির মুখে কোথাও কোথাও সেটা সংস্কারও হয়েছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ভর্তির জন্য যে কোটা চালু আছে, তার যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ