খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

প্রস্তুতির রোডম্যাপ জরুরি

|
১১:৪২ পি.এম | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫


২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। জাতিসংঘের সব শর্ত পূরণ করায় এই সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে চূড়ান্ত। নিঃসন্দেহে এটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। তবে মাত্র ১৫মাস বাকি থাকলেও ব্যবসায়ীমহলে শঙ্কা প্রবল।
তাঁরা মনে করছেন, প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে এলডিসি-পরবর্তী বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে পড়তে পারে। রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা হারালে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানির সক্ষমতা কমে যেতে পারে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর হবে। তাই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে খাপ খাওয়াতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। আর এ জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রয়োজন।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা অমূলক নয়। তৈরি পোশাক খাত থেকে শুরু করে ওষুধশিল্প সব ক্ষেত্রেই রপ্তানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে শুল্ক সুবিধাসহ বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়ে আসছে। এলডিসি উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস সুবিধা হারালে শিল্প খাতগুলো রপ্তানির ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপর্যয় মোকাবেলা করবে।
এতে রপ্তানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেক কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। ওষুধশিল্পের প্রতিনিধিরা সতর্ক করেছেন, শুল্ক ও অন্যান্য সুবিধা হারালে বিদেশি কম্পানিগুলো বাংলাদেশে উৎপাদন চালিয়ে যেতে অনাগ্রহী হতে পারে। তখন রপ্তানি কমার পাশাপাশি দেশীয় বাজারেও ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিনিধিরা সরাসরি বলেছেন, তাঁরা এখনো প্রস্তুত নন। বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান একবার হারালে পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে।
এই বাস্তবতায় তিন বছরের সময় বৃদ্ধির দাবি তাঁরা তুলেছেন। নিটওয়্যার শিল্পের পক্ষ থেকেও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী যথার্থই বলেছেন, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিসহ সব ক্ষেত্রেই কেবল সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, ব্যবসায়ীদেরও নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগী হতে হবে। তবে এ কথাও সত্য, সরকার যদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যথাযথ আলোচনায় না বসে, তাহলে সমন্বিত রোডম্যাপ তৈরি করা সম্ভব হবে না। নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী সমাজকে একসঙ্গে বসতে হবে, যাতে উত্তরণের সুযোগকে হুমকির পরিবর্তে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়।
অতএব এলডিসি থেকে উত্তরণ যেন কোনো বোঝা না হয়, সে জন্য সরকার ও ব্যবসায়ী মহলকে দ্রুত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। শিল্প খাত ভিত্তিক প্রস্তুতি, দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে সমন্বিত রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ যেন সমস্যার কারণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ