খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা অভিন্ন দাবি

জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দাবি জামায়াতসহ তিন ইসলামী দলের

খবর প্রতিবেদন |
১২:৪১ এ.এম | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্র“য়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা অভিন্ন দাবি জানিয়ে মাঠে থাকার কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ তিনটি ইসলামী দল। জামায়াত ছাড়াও অভিন্ন দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফতে মজলিস।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালু, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও দুর্নীতির বিচার এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এছাড়া তিনটি দলই পাঁচ দফা দাবি আদায়ে আগামী অভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল।
সোমবার পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে এসব দাবি জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির  সৈয়দ আবদুল­াহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন ছাড়া বিকল্প নেই। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী এই পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছে।
সৈয়দ আবদুল­াহ মোহাম্মদ তাহের আরও বলেন, ন্যায্য দাবি কার্যকর না হলে গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য জামায়াত ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দিতে হবে। অন্যথায় জনগণের আত্মত্যাগ ও অর্জিত অভ্যুত্থান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
ইসলামী দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তাহের বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের দাবিগুলোর ব্যাপারে সবাই একমত।’
এ সময় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তাহের বলেন, ‘পিআর পদ্ধতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। আমাদের সংবিধানে প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের কথা লেখা আছে, তবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, সেটা লেখা নেই। এটা নির্ধারণ না করে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা অন্যায় হয়েছে।’
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, এড. মতিউর রহমান আকন্দ, আব্দুর রব, মোবারক হোসেন, মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আঃ রহমান মূসা, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিফুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত ও প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার।
‘আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, ফ্যাসিবাদী ও তার দোসরদের বিচার এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন। পাশাপাশি তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে দলটি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, দেশকে স্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্রের ভার থেকে রক্ষা করা, সব নাগরিকের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য। বিগত ৫৪ বছরে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে, সেই পদ্ধতি দেশকে ক্রমান্বয়ে পেছনের দিকে নিয়ে গেছে। অতীতের অভিজ্ঞতায় পুরোনো বন্দোবস্তে নির্বাচন করার কোনো অর্থ হয় না।
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর ১৪ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ জুলাই সনদ এখনো ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন বৈঠক হলেও প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। একটি মহল সবক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে। ফলে সনদ কার্যত বিভিন্ন দলের মতামতের দলিলে পরিণত হয়েছে, যা প্রত্যাশিত ছিল না।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে-আইনি ভিত্তি ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রতিশ্র“তি নির্বাচনের পর আর বাস্তবায়ন হয় না। তাই সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে দ্রুত আইনি বৈধতা দিতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করা সম্ভব হবে না।’
দেশের ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি বলে মন্তব্য করেছেন চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর আমরা ইসলামী দলগুলো একটি বাক্সে যাওয়ার ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছি। আলহামদুলিল­াহ, আল­াহর রহমতে এ রকম পরিবেশ তৈরির অনেকটাই কাছাকাছি।’
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব ইউনুস আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে পাঁচটি অভিন্ন দাবির পাশাপাশি দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিলসহ ছয় দাবি জানিয়েছে খেলাফতে মজলিস।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে খেলাফতে মজলিসের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খেলাফতে মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দলটির মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের পাঁচ দফা দাবিসহ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, সরকার জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার উদ্যোগ না নিলে পরে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতির পক্ষে। সে জন্য তাঁরা এ দাবি করছেন বলে জানান খেলাফতের মহাসচিব।
শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র রক্ষার যে জুলাই আন্দোলন, সেই আকাক্সক্ষা পূরণ না করা হলে খেলাফতে মজলিস মাঠে থাকবে বলেও জানান আবদুল কাদের। তবে এই কর্মসূচিতে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে কোনো সমন্বিত কর্মসূচি পালন করবেন কি না-সে সম্পর্কে কিছু জানাননি।

্রিন্ট

আরও সংবদ