খুলনা | শুক্রবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩ আশ্বিন ১৪৩২

সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা * বিআরটিএর চেয়ারম্যান আসছে আজ

আর্থিক অনুদান পাচ্ছে খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আট পরিবার

এন আই রকি |
০১:২৪ এ.এম | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫


খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আটটি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নিহত পরিবারগুলোকে আর্থিক অনুদান প্রদান করবেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। এ অনুদানের অর্থ তুলে দেওয়া হবে আজ শুক্রবার। এর আগে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর এই পরিবারগুলোকে মনোনীত করা হয়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  নিহত আটটি পরিবারই দরিদ্র। এর মধ্যে চারটি পরিবার স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রীরা তাদের সন্তান নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। এই দুঃসময়ে এমন আর্থিক সহযোগিতায় তারা সকলেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বর্তমান সরকারের কাছে।  
জানা যায়, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ফুটবল মাঠের সন্নিকটে মোটরসাইকেলের দুই আরোহীর সাথে আলম সাধুর সংঘর্ষ হয়। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা ফিরোজ মোল­া ও রুহুল আমিন নিহত হয়। তারা দু’জনেই দিনমজুর এবং পরিবারকে সহযোগিতা করে আসছিল। নিহত হওয়ার পর তাদের পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছরের ২৬ মে ডুমুরিয়া উপজেলার ঝিলেরডাঙ্গা এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয় আজহারুল মোল­া। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীসহ পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। 
২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর নগরীর শিরোমনি বাজারে  ফুটপাতের পাশে সাইকেল নিয়ে অবস্থান কালে থাকা অবস্থায় হানিফ পরিবহনের বাসের ধাক্কায়  নিহত হয় তুহিন মুন্সি। তার মৃত্যুর পর দুই সন্তানকে নিয়ে মানবতার জীবন কাটাচ্ছে মৌসুমী  আক্তার রাফেজা। অন্যান্য পরিবারের মত তিনিও আর্থিকভাবে ৫ লাখ টাকা সহযোগিতা পাচ্ছেন সরকারের কাছ থেকে। এছাড়া নগরীর বয়রা এলাকার বাসিন্দা ও সাব কন্ট্রাকটর সাইফুল ইসলাম গত পাঁচ মাস আগে ট্রাকে চাপায় নিহত হয়,  সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বাস দুর্ঘটনায় খুলনা রূপসা ব্রিজের সন্নিকটে নিহত হয়েছিল। 
এছাড়া যশোরের মণিরামপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাতাপ হোসেন ২০২৩ সালে ডুমুরিয়া উপজেল ইঞ্জিন চালিত ভ্যান চালানোর সময় আলম সাধুর সাথে  সংঘর্ষে নিহত হয় এবং ফুলতলার থানার সামনে মোটরসাইকেল আরোহী মিঠু মুন্সি মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে  মারা যায়। 
নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ রিপোর্ট ও প্রশাসনের সকল কার্যক্রম শেষে খুলনা জেলার আটটি পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবার সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল ছিল না। অনেকে দিনমজুর, ভ্যান চালক ও ড্রাইভার ছিলেন। নিহতরা অনেকেই  পরিবারের প্রধান ও আয়ের একমাত্র উপায় থাকার কারণে তাদের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে বিপদমুখী হয়ে পড়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এমন অবস্থায় সরকারের এমন সহযোগিতায় পরিবারের সকলেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। 
নিহত জাহাতাপ হোসেনের মা রেক্সোনা বেগম জানান, সকালে তারা যশোর থেকে খুলনায় আসবেন। তাদের পরিবার আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই টাকা দিয়ে তারা সংসার চালানোর মতো কিছু করবেন।  
নিহত তুহিন মুন্সির স্ত্রী মৌসুমী জানান, তার বাবা নেই। স্বামীর দুর্ঘটনায় মারা গেছে। শ্বশুর বাড়ি এখনো আছে। তার দু’টি সন্তান রয়েছে। এই টাকা সন্তানদের নামে এফডিআর  করে রাখবে। 
নিহত আজহারুল মোল­ার বাবা আলমগীর মোল­া জানান, তার ছেলে ইট ভাটার মালিক ভাইয়ের সাহেবের গাড়ি চালাত। এই আর্থিক সহযোগিতা পেতে তার অনেক ভূমিকা আছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি অফিস, বি আর টি এ কর্মকর্তা,  বিভিন্ন শ্রমিক  ইউনিয়ন অফিস থেকে সড়ক দুর্ঘটনা নিহতদের সরকারি অনুদান পেতে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছে। 
বিআরটিএ খুলনার সহকারি পরিচালক উসমান সরওয়ার আলম  বলেন, আগামীকাল (আজ শুক্রবার) দুপুরে আমাদের কার্যালয়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আটটি পরিবারকে ৪০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করবেন বিআরটি  চেয়ারম্যান। 
বিআরটিএ খুলনার বিভাগীয় পরিচালক মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ  তিনদিনের সফরে আসছেন। এ সময় তিনি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর এলাকায় বিআরটি অফিস পরিদর্শন এবং কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করবেন। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবেন। 

্রিন্ট

আরও সংবদ