খুলনা | শুক্রবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩ আশ্বিন ১৪৩২

ফ্রান্সে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ধর্মঘট, চাপে ম্যাক্রন

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩০ এ.এম | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫


ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ও তার সরকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ধর্মঘটে নেমেছে দেশটির বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন দেশটির শিক্ষক, ট্রেন চালক, ফার্মাসিস্ট এবং হাসপাতাল কর্মীরা। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দিয়েছে। আসন্ন বাজেট কাটছাঁটের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়, আগের সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা বাতিলসহ জনসেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি এবং পেনশনের সময়সীমা বাড়ানোয় যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন পেশাজীবীরা। ধর্মঘটের ফলে প্যারিসসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো অস্থির হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেননা বৃহস্পতিবার শহরটির মেট্রো লাইন দিনের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ ছিল। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, ধর্মঘট ঠেকাতে তারা মাঠে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীদের একটি সূত্র বলছে, পুলিশ এবং আন্দোনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তারা।
সিজিটি ইউনিয়নের প্রতিনিধি বাস চালক ফ্রেড বলেন, বর্তমান সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন যেভাবে শ্রমিকদের প্রতি অবজ্ঞা দেখাচ্ছেন, তা চলতে পারে না। একই সমাবেশে ৩৩ বছর বয়সী শিক্ষক গেয়েতঁ লেগে বলেন, আমি জনসেবা রক্ষার জন্য এখানে এসেছি। বিশেষ করে, আমি দাবি করছি যে জনগণের অর্থ যেন বড় বড় কোম্পানি বা অতি-ধনীদের কর ছাড়ের মতো সুবিধার বদলে জনসেবা খাতেই ফেরত আসে।
ম্যাক্রন এবং তার নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্টিয়ান লেকর্নু বাজেট কাটছাঁট নিয়ে সংসদের চাপের মুখে পড়েছেন। একই সঙ্গে, ইউরোজোনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির ঘাটতি নিয়ে বিনিয়োগকারীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ধর্মঘট এবং বিক্ষোভে প্রায় আট লাখ মানুষ অংশ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির প্রধান প্রধান ইউনিয়নগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে পূর্ববর্তী সরকারের নিষ্ঠুর এবং অন্যায্য আর্থিক পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আমরা যে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করি, তারা খুবই ক্ষুব্ধ।
গত বছর ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত ৩ শতাংশ সীমার প্রায় দ্বিগুণ ছিল। লেকর্নু এই ঘাটতি কমাতে চাইলেও আইন প্রণয়নের জন্য তাকে অন্যান্য দলের উপর নির্ভর করতে হবে। তাই ২০২৬ সালের বাজেট নিয়ে পার্লামেন্টে সমর্থন আদায় করতে তাকে যথেষ্ট বেগ পোহাতে হবে। লেকর্নুর পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া বেয়রু তার ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর বাজেট সংকোচনের পরিকল্পনার কারণে গত সপ্তাহে পার্লামেন্ট দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী বেয়রুর পরিকল্পনা নিয়ে কী করবেন তা এখনো স্পষ্ট করে জানাননি, তবে তিনি আপস করার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
এফএসইউ-এসএনইউআইপিপি ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে এক-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ধর্মঘটে ছিলেন এবং প্যারিসে প্রায় অর্ধেক শিক্ষক কাজ থেকে বিরত ছিলেন। এই ধর্মঘটের কারণে আঞ্চলিক ট্রেন চলাচল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে দেশটির বেশিরভাগ দ্রুতগতির টিজিভি ট্রেন লাইন সচল ছিল। বিক্ষোভকারীরা তুলোন শহরের কাছে একটি মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়। ফরাসি বিদ্যুৎ সংস্থা ইডিএফ-এর পারমাণবিক উৎপাদন সামান্য কমে গেছে, যেখানে ফ্লামানভিল ১ চুলি­তে কর্মীরা বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।
কৃষকদের ইউনিয়ন কনফেডারেশন পেইসানও এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহŸান জানিয়েছে। এছাড়া, ফার্মাসিস্টরাও তাদের ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলা কিছু পরিবর্তন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।  অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ব্র“নো রিটেইলিয়ো সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে কিছু অবরোধ সরিয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে প্যারিসের বাস ডিপোগুলির সামনের অবরোধও ছিল।
ধর্মঘট ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। দেশজুড়ে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রায়ট ইউনিট, ড্রোন এবং সাঁজোয়া যানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ২০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ