খুলনা | মঙ্গলবার | ২১ অক্টোবর ২০২৫ | ৬ কার্তিক ১৪৩২

এইচএসসি’র ফল হতে পারে অক্টোবরে

যতটুকু লেখা ততটুকু নম্বর, খাতা মূল্যায়নে সতর্ক বোর্ডগুলো

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৫ এ.এম | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫


দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মেধা যাচাইয়ের মান বাড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা বুঝতে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। পরীক্ষার্থী যা লিখেছে সে অনুযায়ী যেন নম্বর পায়, কম বা বেশি নয়, সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ‘সহানুভূতির নম্বর’ দেওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডে সূত্রে জানা গেছে, এবার এইচএসসির পরীক্ষকরা বোর্ড থেকে খাতা নেওয়ার সময় কড়া নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে প্রশ্নপত্রে যা চাওয়া হয়েছে, উত্তরপত্রে শুধু তা-ই বিবেচনায় আনতে হবে। অতিরিক্ত তথ্য লিখলে বা যথাযথ উত্তর না লিখলেও নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার যে এক ধরনের রীতি অতীতে চালু ছিল তা করা যাবে না। শিক্ষা বোর্ড স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে, মূল প্রশ্নের নির্ধারিত উত্তর না লিখলে নম্বর পাওয়া যাবে না। আংশিক উত্তর লিখলে পূর্ণ নম্বর দেওয়া যাবে না।
বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, পলীক্ষার ফলাফল শতভাগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। এভাবে মূল্যায়ন করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার বিকল্প কিছু নেই-এ বার্তা পৌঁছাবে।
এদিকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের ওপরও কঠোর নজরদারি ও নতুন শৃঙ্খলা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খাতা দেখায় গাফিলতি বা অনিয়মের অভিযোগে ইতোমধ্যে ৮ জন পরীক্ষককে সব ধরনের পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে আজীবনের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগে ৭১ জন পরীক্ষককে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে অনেককে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে খাতা দেখায় গাফিলতির অভিযোগ আসায়।
জানা গেছে, এবার খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা যেন মনোযোগ দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করেন এবং প্রশ্নপত্রের নির্ধারিত মানদণ্ড মেনে নম্বর দেন সেজন্য বারবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতা মূল্যায়নে জড়িত (পরীক্ষক) রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, এবারের খাতা মূল্যায়নে বোর্ড যে কঠোর নজরদারি চালিয়েছে এবং নিয়মিত নির্দেশনা জারি করেছে তা আমাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়েছে। প্রতিটি খাতায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়ায় আমরা মনোযোগ সহকারে উত্তরপত্র বিশ্লেষণ করতে পারছি। এর ফলে শিক্ষার্থীর প্রকৃত সক্ষমতা অনুযায়ী নম্বর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আগের চেয়ে এখন আমাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা অনেক বেড়েছে।
নতুন শৃঙ্খলা শিক্ষকদের জন্য প্রথমদিকে চাপ মনে হলেও বাস্তবে এটি অনেক বেশি কার্যকর উলে­খ করে তিনি বলেন, আমি এবার খাতা দেখার সময় খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের বাড়তি নম্বর দেওয়া হচ্ছে না, বরং প্রত্যেকটি উত্তরের যথার্থ মূল্যায়ন নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনিয়ম বা গাফিলতির ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের ওপর কঠোর শাস্তি আরোপ করা হচ্ছে, যা আমাদের আরও সচেতন করেছে।
তবে প্রকৃত মূল্যায়নে যেন কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি অবিচার করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল­ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এবার এসএসসির মতো এইচএসসিতেও প্রকৃত ও যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না এবং সহানুভূতির নম্বর কিংবা বাড়তি নম্বর দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই যে বাড়তি নম্বর দিতে হবে বা ঢেলে দিতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যা লিখবে, সে তার যথাযথ মূল্যায়নটাই পাবে। আর শিক্ষার্থীরা যাতে অবমূল্যায়নের শিকার না হয়, সেটিও আমরা নিশ্চিত করছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহŸায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে এবার শিক্ষার্থীদের প্রকৃত যোগ্যতা প্রতিফলিত হবে। আমরা যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন নিশ্চিত করছি। প্রতিটি খাতার মূল্যায়ন সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে, যাতে প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত হয়।
অক্টোবরের মাঝামাঝি ফল প্রকাশের সম্ভাবনা : বর্তমানে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা দেখা ও ফল  তৈরির কাজ চলছে। পাবলিক পরীক্ষা আইন অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ফল প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষা পিছিয়ে গেলেও তারা প্রথম প্রকাশিত রুটিন ধরে ফল প্রস্তুতের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। তাই তারা ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ফল প্রকাশের চেষ্টা করছেন। কারণ, প্রথম প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ২৬ জুন এবং ১৩ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় পুনরায় সূচি প্রকাশ করতে হয়, ফলে পরীক্ষা শেষ হতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহŸায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। তবে এর আগেও ফল প্রকাশ করা হতে পারে। কাজ শেষ হলেই আমরা ফল প্রকাশ করব।
তিনি আরও বলেন, এইচএসসির ফল প্রকাশের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি। তিনবার পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কারণে খাতা মূল্যায়ন শেষ করতেও কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি ফল প্রকাশে যেন সর্বনিম্ন সময় নেওয়া হয়।
ফলের অপেক্ষায় সোয়া ১২ লাখ শিক্ষার্থী : চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিয়েছিলেন মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছেলে ও ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন মেয়ে। সারা দেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। সে হিসাবে ফলের অপেক্ষায় রয়েছেন সোয়া ১২ লাখ শিক্ষার্থী।
এইচএসসিতে কমছে জিপিএ-৫ : সা¤প্রতিক বছরগুলোতে এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৫.৫৭ শতাংশ। ২০২২ সালে গড় পাসের হার ৮৫.৯৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭৮.৬৪ শতাংশ ও ২০২৪ সালে তা ৭৭.৭৮ শতাংশে দাঁড়ায়। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০২১ সালে ১,৭৮,৫২২ থেকে কমতে কমতে ২০২৪ সালে এসে ৯২,৫৯৫ জনে দাঁড়ায়।

্রিন্ট

আরও সংবদ