খুলনা | রবিবার | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২ আশ্বিন ১৪৩২

মার্চের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি মানুষ চান নিষিদ্ধ আ’লীগকে : সেপ্টেম্বর মাসের জরিপ

ভোটের নতুন জরিপে এগিয়ে বিএনপি পরের অবস্থানেই জামায়াত

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৬ এ.এম | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫


আগামী নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) ভোট দিতে চান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিতে চান ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগকে চান ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তেমন কোনো অবস্থান নেই। তবে জাতীয় পার্টির অবস্থান আরও তলানিতে। ইনোভিশন কনসালটিং নামে একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাঠপর্যায়ের সেপ্টেম্বর মাসের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। 
বুধবার বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্কাইভসের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ফলাফল প্রকাশ করে ইনোভিশন কনসাল্টিং প্রকাশ করেছে ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’-এর রাউন্ড ২-এর দ্বিতীয় অংশের ফলাফল। জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন ইনোভিশন কনসাল্টিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সরোয়ার। অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান, ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর, ব্রেইন এর নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান, ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার জাইমা ইসলাম।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলে ৪৫.৬ শতাংশ ভোট পাবে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী পাবে ৩৩.৫ শতাংশ এবং ৪.৭ শতাংশ ভোট পাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩.৮ এবং জাতীয় পার্টিকে ২.১ শতাংশ ভোটার ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিলে ১৮.৮০ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপি ৩৯.১ শতাংশ, জামায়াত ২৮.১ শতাংশ, এনসিপি ৪.১০ শতাংশ ভোট পেতে পারে। 
জরিপ বলছে, আওয়ামী লীগের ২০ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, ১৪.৮ শতাংশ জামায়াতকে এবং ২.১ শতাংশ ভোটার এনসিপিকে ভোট দিতে আগ্রহী। 
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৭.৫ শতাংশ ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের প্রত্যাশা জানিয়েছেন। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণকেও (৫৪.৬%) তারা বড় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। দুর্নীতি হ্রাস এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারের দাবি আগের তুলনায় বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বেশিরভাগ উত্তরদাতা ভারত (৭২.২%) ও পাকিস্তানের (৬৯%) সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি আগ্রহ কম, ভারতের প্রতি সমর্থন বেশি দেখা গেছে।
ভোটের সিদ্ধান্তে প্রার্থীর যোগ্যতা (৬৫.৫%) সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে উঠে এসেছে। এরপর রয়েছে প্রার্থীর পূর্ববর্তী কাজ (১৪.৮%) ও দলের প্রতীক (১৪.৭%)। তরুণ ভোটাররা প্রার্থীর কর্মক্ষমতাকে বেশি গুরুত্ব দিলেও প্রবীণরা প্রতীকের প্রতি বেশি ঝুঁকেছেন।
দলগুলোর জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ অসন্তুষ্টি (৩৩.৪৩%) ও সর্বনিম্ন উচ্চ সন্তুষ্টি (১৫.৫২%) পেয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সর্বোচ্চ উচ্চ সন্তুষ্টি (৩০.৩৪%) অর্জন করেছে, যদিও এর অসন্তুষ্টিও কম নয় (১৯.৭৪%)। বিএনপি ২১.৫ শতাংশ উচ্চ সন্তুষ্টি ও ২৭.৬ শতাংশ অসন্তুষ্টি পেয়েছে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বিষয়ে জনমত বিভক্ত। ৪৫.৭৯ শতাংশ মনে করেন, সব দলকে অংশ নিতে দিতে হবে। অপরদিকে ৪৫.৫৮ শতাংশ মনে করেন, বিচারাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বড় অংশ আওয়ামী লীগকে বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। 
পরবর্তী সরকার গঠনের উপযুক্ত দল হিসেবে বিএনপিকে বেছে নিয়েছেন ৩৯.১ শতাংশ উত্তরদাতা, জামায়াতে ইসলামীকে ২৮.১ শতাংশ। একই ভাবে ৪০ শতাংশ বিশ্বাস করেন, বিএনপি’র সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
অতীত নেতাদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান সর্বোচ্চ অনুমোদন রেটিং পেয়েছেন। জেনারেশন- জেড বেশি সমর্থন জানিয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে। অপরদিকে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে মেরুকৃত, যেখানে ২১.৬ শতাংশ উত্তরদাতা তাকে শূন্য রেটিং দিয়েছেন। 
ফলাফল উপস্থাপন করেন ইনোভিশন কনসাল্টিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রুবাইয়াত সরওয়ার। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান, ভয়েস ফর রিফর্ম-এর সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর,বিআরএআইএন-এর নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান এবং দি ডেইলি স্টার-এর সিনিয়র রিপোর্টার জাইমা ইসলাম।
ইনোভিশন জানিয়েছে, পিপলস পারসেপশনস অন ইলেকশন সার্ভে একটি সামাজিক গবেষণা উদ্যোগ, যা বাস্তবায়িত হয়েছে ভয়েস ফর রিফর্ম ও বিআরএআইএন-এর সহযোগিতায়।
এর আগে গত মার্চ মাসে একটি জরিপ করেছিল সংস্থাটি। সেখানে আগামী নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) ভোট দিতে চান আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিতে চান ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। ৫৮ শতাংশ ভোটার চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন চান। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগকে চান ১০ শতাংশ মানুষ, যা সেপ্টেম্বরের জরিপে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে।
এর আগে গত রোববার জরিপের প্রথম পর্ব প্রকাশ করে ইনোভিশন কনসালটিং। সেখানে ছিল নির্বাচনী পরিবেশ ও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কর্মদক্ষতার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি।
এই জরিপে দেশের ৬৪ জেলায় ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতা অংশ নিয়েছেন, যা ১৫০টি আসনের প্রতিনিধিত্ব করছে। এটি জাতীয় নির্বাচনী প্রবণতা নিয়ে এ পর্যন্ত পরিচালিত সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত ফেস-টু-ফেস হাউসহোল্ড সার্ভে বলে দাবি করেছে ইনভেশন।

্রিন্ট

আরও সংবদ