খুলনা | রবিবার | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২ আশ্বিন ১৪৩২

শাপলা প্রতীক কেন দেওয়া হবে না, এ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা নয় : সিইসি

‘পিআর পদ্ধতি-আরপিও সংবিধানে নেই’

খবর প্রতিবেদন |
০১:২০ এ.এম | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি সংবিধানে নেই। এ পদ্ধতি আরওপিতে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) নেই। আমাদের যে পদ্ধতি আছে সেখানে সে পদ্ধতিতে পিআর আরপিওতে নেই। আমরা আইন বদলাতে পারি না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অগ্রগতি নিয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে পিআর না প্রচলতি পদ্ধতিতে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিইসি বলেন, আরপিওটা পরিবর্তন করে যদি এটা অন্য একটা দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আইন বদলাতে হবে। আমরা তো আইন বদলাতে পারি না।’
যদি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তবে ফেব্র“য়ারিতে ভোট করা সম্ভব কি? এমন প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সেটা তো আইন বদলাইতে হবে, আরপিও বদলাতে হবে। আর এখানে আরপিওতে যে সিস্টেম আছে সেটা বদলাতে হলে সংবিধানও বদলাতে হবে। আবার সংবিধান বদলাতে বলা হলে আমার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলবে উনি তো পিআরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
এ এম নাসির উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একটা ফয়সালা বা মীমাংসায় আসুক। উনারা তো বুঝবেন যে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে কি হবে না। যদি উনারা পিআর চান তাহলে উনারা বুঝবেন না।’
একটি দলকে শাপলা প্রতীক কেন দেওয়া হবে না, নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার ব্যাখ্যা দেবে না বলে জানিয়ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত, আর ইসি কারও কথায় চলে না, নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আশা করি সব দল নির্বাচনের আগে সমঝোতায় আসবে। রাজনীতিবিদরা কেউ নিয়ম ভাঙার নিয়তে মাঠে নেমেছেন এমন পরিস্থিতি নেই। কমিশন সর্বোশক্তি দিয়ে ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
সিইসি আরও বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিতে গত মাসেই চেয়েছিল ইসি, তবে কোনো অস্বচ্ছতা রেখে দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে চায় না সংস্থাটি। তাই যাদের বিরুদ্ধে নতুন করে আপত্তি আসছে তাদের ব্যাপারে পুনরায় খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। 
সিইসি আরও বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাদের ওপর নির্ভর করে কোনো তদন্ত করতে চায় না ইসি। 
নাগরিক ঐক্যও শাপলা চেয়েছিল তাদেরকেও দেওয়া হয়নি। তাদের নিয়ে কথা না হলে এনসিপির ব্যাপারে এতো কথা কেন এমন প্রশ্ন রেখে সিইসি বলেন, শাপলা প্রতীক কেন দেয়া হবে না তার ব্যাখ্যা দেবে না ইসি। এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত। কোনো দল কিংবা দেশের জনগণ চিঠি দিতেই পারে। কিন্তু এতে কোনো সমস্যা নেই। ইসি কারও কথায় চলে না নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চায়।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ইসি সফল হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। ঐতিহাসিক নির্বাচন করতে চায় কমিশন। 
শাপলা না পেলে এনসিপি যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে সিইসি বলেন, এই হুঁশিয়ারিকে ইসি হুমকি মনে করছে না, কারণ তারা দেশপ্রেমিক, দেশদ্রোহী নয়। 
মিডল ইস্টে ইসি যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, সৌদি, কাতার, যেয়ে প্রবাসীদের এক করে আলাপ করে পাওয়া যায় না। এ্যাম্বাসিতে তাদের ডেকে এনে কানাডার মতো সচেতনতা সৃষ্টি সহজ নয়। ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোতর আমরা সফলতা অর্জন করবো। কাজটা সহজভাবে রেজিস্ট্রেশন করার বিষয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেবো।
পার্টি নিবন্ধন এ মাসেই দেবো বলেছিলাম। এখন পত্র-পত্রিকায় নানান অভিযোগ আসছে। তাই আমাদের অতিরিক্ত ইনফরমেশন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাই দুই একদিন দেরি হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও আপত্তি চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। দলগুলোর নাম ও সংখ্যা বলা যাবে না। কারণ এটার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শাপলা প্রতীকের দাবীর বিষয়ে তিনি বলেন, শাপলা চেয়েছিল মাহমুদুর রহমান মান্না দল, নাগরিক ঐক্য প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনা হয়নি, এখন কেন হচ্ছে। ওদের তো দেয়নি৷ তখন তো আলোচনা হয়নি। এনসিপির শাপলা প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করতে বিধিমালা সংশোধনের চিঠি পেয়েছি৷ এখন কমিশনে আলাপ আলোচনা করে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবো।
বিধিমালা হওয়ার পর তাদের চিঠি যৌক্তিক কতটুকু, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে নাগরিক চিঠি দিতেই পারে। আর একটা দল, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল, তারা চিঠি দিতেই পারে। নাগরিক ঐক্য নিবন্ধিত দল। তারা কেটলি প্রতীক পরিবর্তন করে শাপলা চেয়েছে। আমার সঙ্গে দেখাও করেছে। আমরা দিইনি। এরপর শাপলা চেয়েছে এনসিপি। কমিশন নানা বিবেচনায় শাপলা কাউকে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চিঠি দেওয়ার মাঝে উনাদের আইনের ব্যত্যয় হতে পারে।
শাপলা আদায় কিভাবে করতে তা জানে এনসিপির, এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতারা অনেক কথা বলেন। বলার অধিকার আছে। আমরা শোনার ধৈর্য আছে। আমরা শুনেই যাবো। আমাদের কাজ আমরা করবো।
নির্বাচন হবে কি না, অনেকে এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি বলেন, আমরা ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচনের জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টার ঐতিহাসিক নির্বাচন করার প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়নের জন্যই কাজ করছি। কারো কথায় নয় বিবেকের তাড়নায় কাজ করতে চাই, সোজা পথে কারো পক্ষে কাজ করতে চাই না।
রাজনৈতিক দল আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার। খেলোয়াড়দের ফাইল করার নিয়ত থেকে বিরত থাকতে হবে। ফাউল যাতে না করতে পারে সব ব্যবস্থা নেবো৷ যারা নির্বাচনী মাঠে নামবেন, ফাউল করার নিয়তে নামবে না। আমি ধরে নিচ্ছি তারা সুন্দরভাবে সহায়তা করবে 
এদিকে নৌকা প্রতীক স্থগিত রেখে ১১৫টি প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি শাপলা প্রতীক। প্রজ্ঞাপনে উলে­খ করা হয়, রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২ (প্রেসিডেন্স অর্ডার নং ১৫৫ অব ১৯৭২) এর আর্টিকেল ৯৪ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এ এই সংশোধনী এনেছে নির্বাচন কমিশন। তালিকায় নৌকা স্থগিত রেখে দাঁড়িপাল­া প্রতীক পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে প্রকাশিত তালিকায় শাপলা প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

্রিন্ট

আরও সংবদ