খুলনা | সোমবার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৩ আশ্বিন ১৪৩২

‘এবারের নির্বাচন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জের’ : শক্ত মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে ইসি কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করা হবে

নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ওপর বেআইনি চাপ থাকবে না : সিইসি

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৭ এ.এম | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫


প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি ইসি’র কোনো বেআইনি নির্দেশনা কিংবা চাপ থাকবে না। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা, থানা ও সমমানের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ইলেকশন কমিশন অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করে নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫।
তিনি বলেন, এদেশে কাজ করা খুব চ্যালেঞ্জের কারণ পদে পদে স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব। সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। ঐতিহাসিক নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রতি। নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করা আমাদের অঙ্গীকার।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি ইসির কোনো বেআইনি নির্দেশনা কিংবা চাপ থাকবে না। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ নির্বাচন কমিশন।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নিবিড়ভাবে খেয়াল করেন, দশ মাস ১০ দিনের এই কমিশন শক্ত সমর্থ মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কাজেই এই কমিশনের মেরুদণ্ড যদি শক্ত না হয়, কোনো কমিশনের মেরুদণ্ড কেমন হবে আমি জানি না। কমিশন কারো প্রতি অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করে নাই, করবে না।মালয়েশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেকেই বলছেন ৭০ শতাংশের মতো ভোট পড়তে পারে।
নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, জেন্ডারবান্ধব নির্বাচন করব। নারীদের আমরা গুরুত্ব দেব। কেননা, ওই একদিনই কেবল নারীরা বিশেষ গুরুত্ব পায়। সমান অধিকার পায়।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা ইসির ওপর আমানত। ইহকাল, পরকালে জবাবদিহিতা আছে। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নাই। কারণ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের এমন মন্তব্য করেছেন ইসি সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
আখতার আহমেদ বলেন, ‘ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই। জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো কৃপণতা নেই, আমরা সব কাজ ভালোভাবে করতে চেষ্টা করছি।’
তিনি জানান, এ নির্বাচনে দু’টি বড় চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, একটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপপ্রয়োগ, অন্যটি প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। প্রবাসীদের ভোটাধিকার ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কাজ চলছে, রাতারাতি এটি সম্ভব নয়, যোগ করেন তিনি।
ইসি সচিব আরও বলেন, এআইর অপব্যবহার ঠেকাতে এবং পোস্টাল ভোটিংসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা মোকাবিলায় কমিশন সতর্কভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। লক্ষ্য একটাই স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভোটারদের আস্থা বাড়ানো যায় এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন শক্ত মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কমিশনের কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করা হবে। তবে তাদের সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। শনিবার  আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫’-এ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানান।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের দাবি পূরণ হবে। তাদের ক্ষমতায়ন করা হবে। তবে কর্মকর্তাদেরও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। 
তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন শক্ত মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কারো প্রতি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করছে না। এখানে সবাই পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করছে।
‎‎নিবাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, বিগত সময়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। অনেকে অতিউৎসাহী ছিলেন। এবার সেটা হবে না।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মোঃ সানাউল­াহ, ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। আগামী জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন বক্তারা। তারা আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ