খুলনা | সোমবার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৩ আশ্বিন ১৪৩২

অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি,

উত্তাল খাগড়াছড়ি, শেষ বিকেলে সংঘর্ষ ভাঙচুর লুটপাট ও গুলিবর্ষণ : আহত অর্ধশত

খবর প্রতিবেদন |
০১:২১ এ.এম | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫


খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘিরে অবরোধকারী ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে শনিবার শেষ বিকেলে। শহরের খেজুর বাগান, উপজেলা পরিষদ এলাকা, চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়া ও নারিকেল বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। শহরের অরণ্য বিলাস ও মাউন্টইন হোটেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বনির্ভর বাজার এলাকায় বাঙালি ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জুম্ম ছাত্র ফ্রন্টের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলার আশপাশে এবং গুইমারা উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও উপজেলার আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
অন্যদিকে গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আকতার।
উভয় উপজেলায় শনিবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা অব্যাহত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল থেকে হরতালের সমর্থনে জেলার বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে, গাছে অগ্নিসংযোগ করে করেছে। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করেছে। অবরোধকারীদের ভাঙচুরের হাত থেকে বাদ যায়নি লাশ পরিবহন করা এ্যাম্বুলেন্সও।
নারাইখাইয়া এলাকায় দু’টি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।  
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পুনর্বাসন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে আসা লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর ও চালককে পিটিয়ে আহত করেছেন অবরোধকারীরা। দুপুর ১টার দিকে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ ও উপজেলা পরিষদ এলাকায় উত্তেজিত পাহাড়ি ও বাঙালিদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
পুরো জেলায় পরিস্থিতি থমথমে বলে জানা গেছে। সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শতাধিক পর্যটককে সেনাবাহিনী, বিজিবি নিরাপত্তা দিয়ে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলা পার করে খাগড়াছড়ি নিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত পর্যটকরা খাগড়াছড়িই আছেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে রাতে বা আগামীকাল (রোববার) তাদেরকে নিজ নিজ গন্তব্যে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম।
এর আগে এদিন সকাল ৬ টা থেকে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-এর ব্যানারে শুরু হয় সড়ক অবরোধ। যা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
জানা গেছে, অবরোধ চলাকালে এদিন দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত ৮-১০ জন বাঙালি যুবক আহত হন। এ অবরোধকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় এ্যাম্বুলেন্স ও অটোরিকশা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘যেকোনো প্রকারে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চাই। কোথাও যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।’
উলে­খ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় প্রাইভেট পড়া শেষে ফেরার পথে কয়েকজন যুবক এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর সকালে সন্দেহভাজন হিসেবে শয়ন শীল (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

্রিন্ট

আরও সংবদ