খুলনা | সোমবার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৩ আশ্বিন ১৪৩২

এবার মৌসুমেও ইলিশের দাম ছিল চড়া, আকার অনুযায়ী দাম নির্ধারণের সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের

খবর প্রতিবেদন |
০১:১০ এ.এম | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫


এবার মৌসুমেও ইলিশের দাম ছিল চড়া। এই অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। ইলিশের আকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। রোববার ট্যারিফ কমিশন ইলিশ মাছের দাম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে দাম নির্ধারণের এই সুপারিশ করা হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইলিশের অস্বাভাবিক দামের কারণে বাজারে বেশ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তার ভিত্তিতে ট্যারিফ কমিশন এই সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। চলতি সেপ্টেম্বরে ইলিশের কেজি ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে ইলিশ রপ্তানি হয়। সেপ্টেম্বরে স্থানীয় বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম সর্বনিম্ন ৯০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দাম ২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু চলতি মাসে ভারতে রপ্তানি করা প্রতি কেজি ইলিশের দাম পড়েছে গড়ে ১ হাজার ৫৩৪ টাকা। ভারতে এখন পর্যন্ত ৯৭ টনের বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যমান রপ্তানি মূল্যে যদি ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে পারেন, তাহলে স্থানীয় বাজারের মূল্যে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন মূল্যের (সংগৃহীত মূল্য) তুলনায় অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করছেন।
ট্যারিফ কমিশন ইলিশের দাম বাড়ার পেছনে ১১টি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো-চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, মজুত ও সিন্ডিকেট, জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, মাছ ধরার খরচ বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা সংকট ও পরিবেশগত সমস্যা, অবৈধ জালের ব্যবহার, দাদন, বিকল্প কর্মসংস্থান, নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম ও রপ্তানির চাপ।
ট্যারিফ কমিশন বলছে, গত চার মাসে ইলিশের দামের ঊর্ধ্বগতি বেশ লক্ষণীয় ছিল। গত জুনে প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ৬০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা। আগস্টে সরবরাহ বাড়ার ফলে দাম কিছুটা কমে হয় ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। তবে সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ৯০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় উন্নীত হয়।
এছাড়া গত পাঁচ বছরে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কীভাবে বেড়েছে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। একই ভাবে গত চার বছরে রপ্তানি মূল্যও বেড়েছে বলে কমিশন জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, সরেজমিন সমীক্ষায় দেখা যায়, ইলিশ মাছ প্রায় শতভাগ দেশীয় পণ্য হলেও বাজারে এর দামের পেছনে কৃত্রিমতার সংযোগ রয়েছে। কেননা ইলিশ আহরণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা ডলারের উঠা-নামার তেমন প্রভাব নেই। সমীক্ষায় চিহ্নিত মূল জায়গা হলো- আহরণ পরবর্তী সময়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের নানা স্তর ও তাদের অতিরিক্ত মুনাফা।
তিনি আরও বলেন, মূলত দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি এর পেছনে বেশি ভূমিকা রাখছে মর্মে উঠে এসেছে। সমীক্ষায় এসব স্তর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া, দাদন ব্যবসায়ীদের মনিটর করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইলিশ মাছের খরচ বিশ্লেষণ করে এর সাইজ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ইলিশের প্রান্তিক বিক্রেতা ন্যায্য দাম পাবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের কাছে তা নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে। সার্বিকভাবে, এ ধরনের মূল্য নির্ধারণে বাজারে স্বস্তি আসবে বলে কমিশন মনে করে। একই সঙ্গে এ ধরনের মূল্য নির্ধারণ ডিম, মুরগি ও ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ