খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরাবস্থা শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করুন

|
১২:১২ এ.এম | ০১ অক্টোবর ২০২৫


বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়েছে। প্রতিবছরই সারা বিশ্বের উলে­খযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেকগুলো র‌্যাঙ্কিং হয়। প্রায়ই দেখা যায়, বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থাকে না। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একসময় বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড।
কেন এমন অধোগতি? বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, উপাচার্য, এমনকি শিক্ষক নিয়োগসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাই এ জন্য দায়ী। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই রকম বেদনাদায়ক চিত্রই উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশির ভাগ নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুমের জন্যই পর্যাপ্ত জায়গা নেই, শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই। ছাত্রাবাস, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি কিংবা অন্য সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। এমন অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলোতে একটি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমান সুযোগ-সুবিধাও নেই। কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৬টি। এর মধ্যে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।
২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ভাড়াবাড়িতে বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই করুণ। যেগুলোর একটি স্কুলের সুবিধাও নেই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বসার জায়গা করা হয়েছে পরিত্যক্ত গাড়ির গ্যারেজে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণে অগ্রগতি থাকলেও বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জায়গা খুঁজতে খুঁজতেই হয়রান।জানা যায়, পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়েছে গত পাঁচ-সাত বছরে। এ সময় কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরে অনুমোদন পায় নতুন নতুন অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ন্যূনতম অবস্থা না থাকায় আশপাশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভাড়া জায়গায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ; ইউনিভার্সিটি অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, বাংলাদেশ; নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য এখনো জমিই খুঁজে পায়নি।
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান  বলেন, ‘নতুন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা ছাড়াই করা হয়েছে। তাদের অবকাঠামো নেই। আগের কমিশনও নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিল না। ফলে পুরো পরিস্থিতিটাই জটিল হয়ে পড়েছে। তারা উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারছে না। ফলে উচ্চশিক্ষা নিয়ে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।’ শিক্ষার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) অনুমোদন ও তা বাস্তবায়নের দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে স¤প্রতি বিক্ষোভ করেছেন কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষায় এমন অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অবিলম্বে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।

্রিন্ট

আরও সংবদ