খুলনা | সোমবার | ১৩ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে পিআর পদ্ধতি নিশ্চিতের দাবি

প্রশাসনে বিশেষ দলের লোক বসিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চলছে : গোলাম পরওয়ার

‎খবর প্রতিবেদন |
১২:২৫ এ.এম | ১১ অক্টোবর ২০২৫


প্রশাসনে একটি বিশেষ দলের লোককে পদায়ন করে আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বল হয়ে, কারও চাপে মাথা নত করে, প্রশাসনে কোনো দলের পছন্দের লোককে বেছে বেছে পদায়ন করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। এগুলো বন্ধ করে নির্বাচনের মাঠকে সমান সমতল করতে হবে। প্রতিটি ছোট-বড় দল যেন নির্বাচনের সমান রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত সব সুযোগ অবাধে সমানভাবে ভোগ করতে পারে। থানার ওসি থেকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকের ভূমিকা এখনো জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ফ্যাসিস্টের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল ১৭টা বছর শেখ হাসিনাকে পাহারা দিয়ে রেখেছিল। তারা যদি পাহারা না দিত, এত দিন তারা টিকতে পারত না, সাজানো-বানানো নির্বাচন তারা করতে পারত না। একই অপরাধে অপরাধী হওয়ার কারণে তাদেরও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ট্রাইব্যুনালের কাজের অগ্রগতি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো কালো হাতের হস্তক্ষেপে যদি এসব খুনি বেঁচে যায়, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। বাংলাদেশের ওপরে আধিপত্যবাদীদের ও দিলি­র আধিপত্যবাদের আঁশে আমাদের হয়তো বসবাস করতে হতে পারে। সেই কারণে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, পিআর পদ্ধতি, আমাদের অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুন্দর ও নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এখনো প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার প্রতি আস্থা আছে উলে­খ করে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘একদিকে আপনি যেমন সরকারের প্রধান, অন্যদিকে আপনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেরও প্রধান। দু’টি প্রধান দায়িত্ব নিয়ে আপনি শক্ত থাকবেন। আপনার চারদিকে যে সমস্ত উপদেষ্টা আছেন, মাঝে মাঝে কোনো দিকে আপনাকে ঠেলে দিয়ে কোনো একটি বিশেষ দলের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা এই দৃশ্য আর দেখতে চাই না।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে পিআর পদ্ধতি নিশ্চিতের দাবি : জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন গণভোটের মাধ্যমে পিআর বিষয়ে জনগণের মতামত নিতে হবে। জনগণের এই দাবি কোনো ভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। গোলাম পরওয়ার জানান, পিআর জনগণ বোঝে না-এমন প্রচার চালানো হচ্ছে, কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এটি জনগণের ন্যায্য দাবি।
একটি দলের সহযোগিতা না করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, অনেকে মুখে দেশের স্বার্থের কথা বললেও বাস্তবে তারা কোনো সংস্কারে সহযোগিতা করছে না। নির্বাচন সংস্কারের ক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহণ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি হয়তো বাংলাদেশের কাছে নতুন, কিন্তু সারা পৃথিবীতে এটি জনপ্রিয় ও কার্যকর। বাংলাদেশের বিভিন্ন গোলটেবিল আলোচনায়, সেমিনার ও সম্পাদকীয়তে এই পদ্ধতির সুফল তুলে ধরা হয়েছে। তাই তিনি সরকারের কাছে এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে আহŸান জানান, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে জাতির আকাক্সক্ষা অনুযায়ী পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫ দফা দাবিতে রাজধানীতে জামায়াতের গণমিছিল : জুমার নামাজের পর ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীতে এক বিশাল গণমিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেইট থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলে অংশ নেন দলের কেন্দ্রীয়, উত্তর ও দক্ষিণ মহানগরী শাখার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও হাজারো নেতা-কর্মী।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এই গণমিছিল দেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচির অংশ। তিনি সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেন, জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। গণমিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে তাদের দাবি ও অবস্থান তুলে ধরেন। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আশপাশ এলাকায় ব্যাপক পুলিশী মোতায়েন দেখা যায়, তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগণের মৌলিক অধিকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন, সাংবিধানিক কাঠামো পুনঃস্থাপন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তারা এই কর্মসূচি পালন করছে। মিছিল শেষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের শীর্ষ নেতারা জনগণের পাশে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, এই দাবিগুলো শুধু জামায়াতের নয়, সমগ্র জাতির মুক্তি ও কল্যাণের দাবি।

্রিন্ট

আরও সংবদ