খুলনা | রবিবার | ১২ অক্টোবর ২০২৫ | ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

কয়রা ও পাইকগাছায় জামায়াতের ঐতিহাসিক ছাত্র-যুব সমাবেশ

দুই একজন উপদেষ্টা এবং প্রশাসন ষড়যন্ত্র করে একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার চেষ্টা করছে : গোলাম পরওয়ার

পাইকগাছা ও কয়রা প্রতিনিধি |
০৪:৪৪ পি.এম | ১১ অক্টোবর ২০২৫


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা বাড়ছে। দুই একজন উপদেষ্টা এবং প্রশাসন গোপনে গোপনে ষড়যন্ত্র করে একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা কেমন যেন একটা চাপের মধ্যে আছে। তবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের গোপন পথ ছেড়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে তিনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, ২৪ এর গণআন্দোলনের ছাত্র-জনতার যুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আর আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই দ্বিতীয় যুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে পাঠাতে হবে। সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “জামায়াতে ইসলাম ক্ষমতায় গেলে প্রথম কাজ হবে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে এমন ব্যবস্থা চালু করা, যাতে সবার শিক্ষা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় কাজ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন।” তিনি আরও বলেন, সুবিচার প্রতিষ্ঠায় কুরআনের আইনকে সংসদে পাঠাতে হবে এবং কুরআনের ভিত্তিতে সমাজ গঠন করতে হবে। এজন্য তিনি দাড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার আহŸান জানান। তিনি বলেন, কালো টাকা, মনোনয়ন বাণিজ্য, চোর,ডাকাত, চাঁদাবাজদের যারা নির্বাচিত করতে পারবে না, তারাই পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। জুলাই সনদকে আইনী ভিত্তি দিয়ে আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে তা নির্ধারণে গণভোট নেওয়ার দাবি  জানান তিনি। তিনি বলেন, জনগণ যদি পিআর’র পক্ষে ভোট না দেয়, জামায়াত সেই রায় মেনে নেবে। তিনি বলেন, ৫৪ বছরের ইতিহাসে অনেক শাসন আমরা দেখেছি। এখন দেশের মানুষ জামায়াতকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। সারা দেশে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের জনপদ থেকে যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। শনিবার  সকাল ৯টায় খুলনা জেলার কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ মাঠ ও পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে পৃথক ঐতিহাসিক ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
কয়রা উপজেলা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক খুলনা-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
কয়রা উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা শেখ মোঃ সায়ফুল্যাহ’র পরিচালনায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ইসলামীর ছাত্রশিবিরের স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক নোমান হোসেন নয়ন, খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও গাউসুল আযম হাদী, খুলনা জেলা উত্তরের সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, খুলনা দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু জার আল গিফারী ও সেক্রেটারি মোঃ অয়েস কুরুনী, কয়রা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা সুজাউদ্দীন, ইনলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের খুলনা জেলার সহ-সভাপতি হাফেজ মোহাম্মদ আসাদুল্যাহ আল গালিব, কয়রা উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিরণ চন্দ্র মন্ডল, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন আমীর মাওলানা মতিউর রহমান, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন আমীর জি এম নূর কামাল, কয়রা ইউনিয়ন আমীর জি এম মিজানুর রহমান, মহারাজপুর ইউনিয়ন আমীর সাইফুল্লাহ হায়দার, মহেশ^রীপুর ইউনিয়ন আমীর মৌলভী আবু সাঈদ, বাগালী ইউনিয়ন আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল হামিদ, আমাদী ইউনিয়ন আমীর মাওলানা সাজ্জাদুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়রা দক্ষিণ থানার সভাপতি আসমাতুল্লাহ আল গালিব, কয়রা আদর্শ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোঃ মাজহারুল ইসলাম, কয়রা উত্তর থানা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাফেজ আল আমীন, হাফেজ আব্দুল্লাহ প্রমুখ। 
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জাতীয় পার্টি এবং রাশেদ খান মেনন-ইনুরাই ফ্যাসিস্টকে টিকিয়ে রেখেছিল। সুতরাং তাদেরও এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। তিনি বলেন, আমীরে জামায়াত বলেছেন আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আমাদের আগামীর সংগ্রাম হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমরা একবার ক্ষমতার অংশীদার হয়েছিলাম, আমাদের দু’জন মন্ত্রী ছিল। সকল সংস্থা তন্নতন্ন করেও তাদের কোন দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। আগামী দিনে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে এই দলের এমপিরা ফ্রি প্লট, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি, ফ্ল্যাট নেবেনা।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচন মহা উৎসবের সাথে পালিত হবে বলে বিশ্বাস করি। আমাদের নেতারা ইসলামের বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন। আমাদের সামনে সেই সুযোগ হাজির হয়েছে। দেশের সকল ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আজকের কর্মসূচী পর্দায় অন্তরালে অনেক মা বোন এসেছেন। হিন্দু ভাইয়েরা এসেছেন। তারা ভোটে দাঁড়িপাল্লার জন্য কাজ করবেন। 
নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, আগামীর বাংলাদেশ কোন পথে যাবে আজকের সমাবেশ তার ইংগিত দিচ্ছে। এ পর্যন্ত যতো সমীক্ষা হয়েছে, সব সমীক্ষায় দেখা গেলে আগামীতে ইসলামি দল বিজয়ী হবে। কিছু রাজনৈতিক দল কেন পি আর পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন জানতে গিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই যারা দেশটাকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছেন তারাই পিআর সিস্টেমের বিরোধিতা করছেন। তিনি বলেন, এ দেশের তরুণ যুবকরা জেগে উঠেছে। এই প্রজন্ম আগামী নির্বাচনে তাদেরকে প্রতিহত করবে।
এর আগে সকাল ৯টায় পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ছাত্র-যুব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাইকগাছা উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমান। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক খুলনা-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
পাইকগাছা উপজেলা সেক্রেটারি মোঃ আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু জার আল গিফারী, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এড. শাহ আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও গাউসুল আযম হাদী, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য এড. শফিকুল ইসলাম লিটন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এড. লিয়াকত আলী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম ও অধ্যাপক নূরুজ্জামান মল্লিক, জেলা ইউনিট সদস্য মাওলানা শেখ কামাল হোসেন, কাজী তামজীদ আলম, এড. আব্দুল মজিদ ও অধ্যাপক আব্দুল মোমিন, পাইকগাছা উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি আহম্মদ আলী, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা বুলবুল আহম্মদ, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল খালেক, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল হান্নান ও মাওলানা আব্দুস সবুর, পৌরসভা আমীর ডাঃ আসাদুল হক ও সেক্রেটারি মিজানুর রহমান, পাইকগাছা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও পাইকগাছা বাজার কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অমরেশ চন্দ্র মন্ডল, কয়রা-পাইকগাছা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি এস এ মুকুল, পাইকগাছা দক্ষিণ থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারিক মাহমুদ শিশির ও উত্তর থানা সভাপতি খালিদ মাহমুদ রেজা, হাফেজ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। 
সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “এর আগে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব হয়েছে, এবার সুশাসনের জন্য বিপ্লব করতে হবে। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এখন ঐক্য তৈরি হয়েছে-এই ঐক্য থাকলে বাকিরা বাতিলের খাতায় চলে যাবে।” নির্বাচনে জয়ী হলে জামায়াত নেতারা কোনো সরকারি প্লট, গাড়ি, বাড়ি বা অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করবেন না বলেও ঘোষণা দেন তিনি। একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও এমন ঘোষণা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।
জামায়াতে এই সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, দেশবাসী অনেক শাসন দেখেছে এবার নতুন কিছু দেখতে চায়। এবার চায় লাঙল দিয়ে ধান চাষ করে নৌকায় করে বাড়ি তোলা হয়েছে এবার অন্তত: দাড়িপাল্লা দিয়ে তা’ মেপে বুঝপর করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, অপশাসন দূর করতে আল কুরআনের শাসনের কোন বিকল্প নেই। তাই দেশের সকল ইসলামী দলের সাথে একটি বোঝাপড়া হয়েছে। সেই জোটের ভিত্তিতেই আগামী ফেব্র“য়ারিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে। বিগত তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি এবার অন্ততঃ ভোটদান নিশ্চিত করা হবে সেই প্রত্যাশা জনগণের।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আগামী নির্বাচন ফেব্র“য়ারিতেই হতে হবে উল্লেখ করে বলেন, অনেকে পিআর পদ্ধতির সমালোচনা করছেন। কিন্তু যারা পিআর বোঝেন না তাদের রাজনীতি করার কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই। প্রবাসীদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি এলাকার উন্নয়নে তাদের অবদান রাখার আহবান জানান। এ সময় তিনি কয়রা-পাইকাগাছার উন্নয়নে ২০ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে বলেন, জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দু’টি উপজেলা নিয়ে সুন্দরবন জেলা গঠনসহ অন্যান্য সব সমস্যার পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে ইনশাআল্লাহ।

্রিন্ট

আরও সংবদ