খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

একাত্তর ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিছু মানুষ

চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু জনগণ মেনে নেবে না : মির্জা ফখরুল

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৪ এ.এম | ১৩ অক্টোবর ২০২৫


সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু জনগণ মেনে নেবে না। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একাত্তরের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিছুসংখ্যক মানুষ। ‘আমাদের মাথায় রাখতে হবে, একাত্তরের যুদ্ধ হয়েছিল বলে আমরা স্বাধীন হয়েছি। স্বাধীন হতে পেরেছিলাম বলেই নতুন রাষ্ট্রে নতুন চিন্তা করতে পারছি। স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম করতে পারছি।’ 
তিনি বলেন দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংস্কার কমিশন যেসব বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা যে প্রস্তাব দিচ্ছে এর বেশিরভাগই বিএনপি’র ৩১ দফায় আগে থেকেই আছে। আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এ বিষয়ে সনদ স্বাক্ষর করা হবে। যে বিষয়গুলো একমত হয়নি, সেগুলো নির্বাচনের সময় ম্যান্ডেট নিয়ে যেতে হবে। 
মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন ধারণা পিআর নিয়ে আদৌ জনগণের ধারণা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংস্কার কমিশন সেই প্রস্তাব আনেনি, এনেছে রাজনৈতিক কয়কেটা দল। পিআর নিয়ে কথা হচ্ছে, আন্দোলন হচ্ছে। কারণ একটাই, সেটা হচ্ছে নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। পিআর জনগণ গ্রহণ করবে না। বিএনপি আগেই বলেছে এটা হবে না। চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু জনগণ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, জনগণ নির্বাচন দেখতে চায়, যার মাধ্যমে জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে গিয়ে তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে চায়। ১৪ মাসে রাতারাতি সংস্কার হয়ে যাবে, জনগণ তা বিশ্বাস করে না। তারা চায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে। 
বিএনপি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে চায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হবে, জনগণ যেই নির্বাচনে পরীক্ষিত দলকে বেছে নেবে। ‘একটা অনুরোধ, যে সুযোগ দেশের মানুষ পেয়েছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য, সেই সুযোগ আবার যেন না হারাই। কিছু মানুষ চেষ্টা করছে একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে। একাত্তর হয়েছে বলেই আজ দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। অনেক ষড়যন্ত্র আছে। তাকে পরাজিত করার শক্তি দেশের মানুষের আছে’, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। 
সংস্কারের মধ্যেই বিএনপি’র জন্ম হয়েছে উলে­খ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সব সময় সংস্কারের পক্ষে ছিলাম, যদিও আমাদের বিরুদ্ধে এখনো প্রচারণা চালানো হচ্ছে, আমরা নাকি সংস্কারের বিরুদ্ধে। পরিষ্কার বলে দিতে চাই, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি, মিডিয়ার স্বাধীনতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে হয়েছে। জিয়াউর রহমান যেমন অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, তেমনি কর্মযজ্ঞে হাতে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’ 
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গত ১৬-১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সেই ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশকে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগ যেন আমরা না হারাই।’ 
প্রতিদিন নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে-এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এ দেশের মানুষ কখনো ভুল করেন না। তারা সব সময় সঠিক পথে এগিয়ে যায়। অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে পরাজিত করার শক্তি এ দেশের মানুষের আছে। নেতা-কর্মীদের ইউটিউব ও ফেসবুকের তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করা পরামর্শ দেন বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা।’  
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ বছর পর আমরা এক ফ্যাসিস্ট শাসনকে সরিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম অতি দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন বলে। তিনি চেষ্টা করেছেন, সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন, নতুন কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ১৭ তারিখে সেসব প্রস্তাবে সই হওয়ার কথা।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্যে রাখেন জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমা ও গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা প্রমুখ।

্রিন্ট

আরও সংবদ