খুলনা | সোমবার | ১৩ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

গাড়ি পোড়ানোর মামলায় মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির ১৬৭ নেতাকর্মীকে অব্যাহতি

খবর প্রতিবেদন |
০২:১২ পি.এম | ১৩ অক্টোবর ২০২৫


সাত বছর আগে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ দলটির ১৬৭ নেতাকর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজ এ মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এ আদেশ দেন।

অব্যাহতি পাওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, মিডিয়া উইংয়ের শামসুদ্দিন দিদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমুনুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায়, যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনজু, ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রদলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিনসহ প্রমুখ।

মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলাটিতে মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। পরে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে আমরা তাদের স্থায়ী জামিনের আবেদন করেও দীর্ঘদিন সেটা পাইনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের স্থায়ী জামিন দেন আদালত। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় এ মামলার দায় হতে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। আজ আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ করে অভিযোগের দায় থেকে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় দেরিতে হলেও আমরা সুবিচার পেয়েছি।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল ফকিরাপুলের দিক থেকে ব্যান্ডপার্টি, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শো-ডাউন করতে করতে নয়াপল্টনে অবস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। পরে নবী উল্লাহ নবী ও কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে আরও দুটি মিছিল ব্যানার ও ফেস্টুনসহ একই দিক থেকে শো-ডাউন করে আসে। সর্বশেষ মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে প্রায় ৮–১০ হাজার মানুষের একটি বিশাল মিছিল ব্যান্ডপার্টি, ব্যানার ও ফেস্টুনসহ শো-ডাউন করে নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছায়।

তারা নয়াপল্টনস্থ ভিআইপি রোডে মিছিল ও শো-ডাউন করে রাস্তা বন্ধ করে দেয়, ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয় এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের রাস্তার এক পাশ ছেড়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ও জনদুর্ভোগ না ঘটাতে অনুরোধ করলে তারা পুলিশের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিএনপি অফিসে অবস্থানরত রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের অবহিত করে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করার অনুরোধ জানায়। এছাড়া বিএনপি অফিসের মাইকে ঘোষণা দিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা না সৃষ্টি করার আহ্বান জানাতে অনুরোধ করা হয়।

পূর্বপরিকল্পিতভাবে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আসামিরা অবৈধ জনতাবদ্ধ হয়ে বিএনপি অফিস থেকে লাঠিসোটা হাতে বেরিয়ে আসে এবং নয়াপল্টনস্থ ভিআইপি রোডে হকস বে নামের গাড়ির শোরুমের উত্তর পাশে অবস্থানরত পুলিশের একটি সরকারি ডাবল কেবিন পিকআপে আগুন দেয়। এতে আনুমানিক ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।

তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়, সরকারি কাজে বাধা দেয় এবং পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অতর্কিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। রাস্তায় তারা বিভিন্ন ধরনের সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। ওই সময় আসামিরা আবারও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

এসময় রাস্তার পাশে দায়িত্বে থাকা এসি (পেট্রোল-মতিঝিল) এর সরকারি মিতসুবিশি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দিলে মুহূর্তের মধ্যেই গাড়িটি দাউদাউ করে জ্বলে পুড়ে ভস্মে পরিণত হয়। আগুনে পুড়ে গাড়িটির আনুমানিক ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।

আসামিদের নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হন। আহতদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেন।

ঘটনার পর আসামিরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দিতে নাইট এ্যাঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালায় এবং প্রাইভেট কারসহ রাস্তায় আটকে থাকা আরও অনেক গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে পুলিশের কর্মক্ষমতা ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

এ ঘটনায় পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। 

্রিন্ট

আরও সংবদ