খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

কৃষকের কান্না : পাউবো’র প্রতি অভিযোগ আমলে নিন

|
১২:২৭ এ.এম | ১৪ অক্টোবর ২০২৫


খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়ায় ঢাকী নদীর ভেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কেবল লোকালয়েই পানি ঢোকেনি, তা হাজারো কৃষক পরিবারকে পথে বসিয়েছে। তারা এখন শুধুই শুকনা চিড়া-মুড়ি বা গুড়ের ত্রাণ চায় না, তাদের একটাই দাবি-একটি স্থায়ী বাঁধ। যেখানে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের কথা শোনা যায়, সেখানে একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কারণে ২ হাজার ২৩১ বিঘা জমির আমনের ফসল পানিতে তলিয়ে গেল। এমন নির্মম বাস্তবতার মধ্যে আর কতকাল কাটাতে হবে দাকোপের কৃষকদের?
বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর পাউবো ও স্থানীয় মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে ঢাকী নদীর পানি আটকানো গেছে। কিন্তু এর মধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি তো পানিতে তলিয়ে গেছেই, সেই সঙ্গে ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। গত বছরও পানখালী ভেঙেছিল, এবার ভাঙল বটবুনিয়া। আর এই ভাঙন এমন এক সময়েঘটল, যখন আমন ধানে থোড় আসার সময়, যখন জমিতে পানির পরিমাণ কম থাকা দরকার। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, এখন বাঁধ মেরামতের নামে কেবল বালু ও জিও টিউব ব্যবহার করা হয়, যা টেকসই নয়। বালুর বস্তা ভেসে যায়। অথচ আগে বাঁশের খাঁচা ও আধভাঙা ইট দিয়ে টেকসই বাঁধ তৈরি হতো। প্রশ্ন হচ্ছে, টেকসই বাঁধ নির্মাণের আধুনিক প্রযুক্তি কি পাউবো’র আয়ত্তে নেই? নাকি এখানে সদিচ্ছার অভাব? গতানুগতিক পদক্ষেপ নিয়ে এই সমাধান খোঁজার চেষ্টা আর কত?
গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, কোনো তদারকি নেই। তাদের (পাউবো) গাফিলতি বলার মতো নয়। বরাদ্দ ঠিকই হয়, কিন্তু জায়গামতো তা পৌঁছায় না। ফিরোজা বেগম নামের এক নারীর বক্তব্য, ‘বাড়তি কোনো ইনকাম নেই এখানকার মানুষের। এই একটা ফসলেই ভরসা। এই ধান খেয়ে ও বিক্রি করে সংসার চলে। আগামী একটা বছর কী হবে, সেটা নিয়েই চিন্তা। বাঁধটা যদি এক দিন আগেও বাঁধা যেতো, ফসলের ক্ষতি এত হতো না।’  
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এই পোল্ডারের জন্য ২২ কিলোমিটার নদীশাসন, পুনর্বাসন এবং বাঁধ নির্মাণের জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি আশার আলো। কিন্তু এই প্রস্তাব কবে অনুমোদন পাবে, কবে কাজ শুরু হবে আর সেই কাজ কতটুকু দুর্নীতিমুক্ত ও টেকসই হবে, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। অতীতেও এমন বড় প্রকল্পের কথা শোনা গেছে, কিন্তু বরাদ্দ, দীর্ঘসূত্রতা ও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। তবে এখনই সময় এই প্রস্তাব দ্রুত অনুমোদন দিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই সঙ্গে শুধু বালুর বাঁধ নয়, স্থানীয়দের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ