খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

মেক্সিকোতে দুই মৌসুমি ঝড়ে নিহত ৬৪, নিখোঁজ ৬৫

খবর প্রতিবেদন |
০২:৩৫ পি.এম | ১৪ অক্টোবর ২০২৫


মেক্সিকোর উপসাগরীয় উপকূলে ভয়াবহ বন্যা ও তেল দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তেলনগরী পোজা রিকা। প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসে অন্তত ৬৪ জন নিহত এবং আরও ৬৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় এক লাখ ঘরবাড়ি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভেরাক্রুজ, হিদালগো, পুয়েবলা, কোয়েরেতারোসহ পাঁচটি রাজ্যে।

তেল উৎপাদনের জন্য পরিচিত পোজা রিকায় বন্যার সঙ্গে তেলজাত পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাছাকাছি রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেমেক্স (Pemex)-এর স্থাপনাগুলো থেকে তেল ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পেমেক্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন তারা পায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা লিলিয়া রামিরেজ বলেন, প্লাবিত স্রোতের পানি তার বাড়িতে ঢোকার মাত্র পনেরো মিনিট আগে তিনি সামান্য কিছু জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যান। ফিরে এসে দেখেন, তার বাড়ির প্রথম তলা ছাদ পর্যন্ত পানি ও কাদায় ভরে গেছে।

বন্যাপরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে মেক্সিকো সরকার প্রায় ১০,০০০ সৈন্য ও উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ২০০টি বিচ্ছিন্ন এলাকায় খাবার ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে এবং আহতদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে, ত্রাণে কোনো ফাঁকি দেওয়া হবে না। দেশের দুর্গম কিছু এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।’

৬ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ভেরাক্রুজ রাজ্যে প্রায় ২৪.৭ ইঞ্চি (৬২.৭ সেন্টিমিটার) বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারি বৃষ্টির ফলে ভেরাক্রুজে ২৯ জন, হিডালগোতে ২১ জন, পুয়েবলায় ১৩ জন এবং কোয়েরেতারোতে ভূমিধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ভয়াবহ বৃষ্টিপাতের জন্য দায়ী হারিকেন প্রিসিলা ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় রেমন্ড, যেগুলো মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে তৈরি হয়েছিল।

নৌবাহিনীর সচিব রেমুন্ডো মোরালেস জানিয়েছেন, কয়েক মাসের টানা বৃষ্টিতে নদীগুলো আগে থেকেই উপচে পড়েছিল। আর প্রবল বর্ষণে ভূমিধস ও বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়।

প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম বলেন, ‘বৃষ্টি এমন প্রবল হবে, এটি ধারণা করা যায়নি।’

বন্যা ও ভূমিধসে বহু সেতু, সড়ক ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু শহর বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছিল, যদিও এখন বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। সরকার ডেঙ্গুসহ ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রবার্তো ওলভেরা বলেন, ‘কাছের পেমেক্স স্থাপনাগুলো থেকে সাইরেন বাজলে আমরা জানতাম বিপদ আসছে। কিন্তু আশপাশের অনেক মানুষ ঘরে রয়ে গিয়েছিলেন- কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন।’

প্রবল বৃষ্টি ও তেল দূষণে পোজা রিকা এবং আশপাশের অঞ্চল এখনো বিপর্যস্ত। সরকার উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্যোগের তীব্রতা ও পরিবেশগত ক্ষতির কারণে পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ