খুলনা | বুধবার | ১৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

বিনামূল্যের পাঠ্যবই : মান নিয়ে প্রশ্ন, দায় কার

|
১১:৫৪ পি.এম | ১৪ অক্টোবর ২০২৫


প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেওয়ার উৎসব জাতির এক বড় সাফল্যের প্রতীক। এতে শুধু শিক্ষার সুযোগই নয়, সামাজিক সমতার ভিত্তিও মজবুত হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই মহৎ উদ্যোগের গায়ে বারবার কলঙ্ক লেগে যাচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিনামূল্যের পাঠ্যবই সরবরাহ : শুরুতেই ধরা পড়ছে নিম্নমানের বই’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আবারও সেই কালিমাকেই তুলে ধরেছে।
নানা জটিলতা পেরিয়ে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শুরু হলেও সরবরাহের শুরুতেই হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় নিম্নমানের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ওয়ার্ক বুক ও এক্সারসাইজ বুক ধরা পড়াটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে নিম্নমানের চালানটি ফেরত গেলেও প্রশ্ন থেকে যায়, এ ধরনের নিম্নমানের বই ছাপার সাহস প্রকাশনা সংস্থাগুলো পাচ্ছে কোথা থেকে?
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির খাতার প্রস্থে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন মানা হয়নি এবং সরবরাহ করা বই ও খাতার কাগজের মান নমুনা কপির চেয়ে নিম্নমানের। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নিম্নমানের বই সরবরাহের অভিযোগ স্বীকার করে তদন্তের আশ্বাস দিলেও অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। গত বছরও এনসিটিবি’র ৩২টি টিমের অনুসন্ধানে ৩৩ শতাংশ বই নিম্নমানের পাওয়া গিয়েছিল, সংখ্যার দিক থেকে প্রায় ১৩ কোটি বই। শতকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠলেও সেই প্রতিবেদন জনসমক্ষে আসেনি এবং নিম্নমানের বই সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এনসিটিবি অবশ্য ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মান নিশ্চিত করতে প্রতি ফর্মায় প্রেসের নাম লেখা, দ্বৈত ল্যাবে কাগজ পরীক্ষা, প্রতিটি প্রেসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। কাগজের মান উন্নত করতে জিএসএম এবং ব্রাইটনেসও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এত কড়াকড়ির পরও যদি শুরুতেই নিম্নমানের বই ধরা পড়ে, তবে এই নতুন মনিটরিং ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। শিক্ষার্থীদের হাতে নিম্নমানের, সহজে ছিঁড়ে যাওয়া এবং অস্পষ্ট ছাপার বই তুলে দেওয়া অর্থ ও সম্পদের অপচয় মাত্র নয়, এটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের প্রতিও এক চরম অবহেলা।
বিনামূল্যের পাঠ্যবই কর্মসূচির বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই আগামী শিক্ষাবর্ষে যেন একটিও নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদের হাতে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে কঠোর তদারকি ও জবাবদিহির মাধ্যমে। মনে রাখতে হবে, বইয়ের মানের সঙ্গে জড়িত জাতির মান।

্রিন্ট

আরও সংবদ