খুলনা | বুধবার | ১৫ অক্টোবর ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র ‎

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৩ এ.এম | ১৫ অক্টোবর ২০২৫


জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। ১৭ অক্টোবর দলগুলো এই সনদে স্বাক্ষর করবে। জাতীয় সংসদ ভবনে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণের চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সব দলের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ পাঠানো হয়েছে। আগামী শুক্রবার ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরবর্তী ধাপে উপনীত হতে পারব।’

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া পাঠানো হয়। সেই খসড়ার ওপর পাওয়া মতামত যুক্ত করে জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে। পটভূমিতে কিছু ভাষাগত পরিবর্তনের পাশাপাশি ‘ঐকমত্যের ঘোষণা’ শিরোনামে জুলাই সনদে নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে।

জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের পটভূমিতে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ; পাকিস্তানি শাসনামলের শোষণ ও বঞ্চনার পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতাযুদ্ধ; পঁচাত্তরে বাকশাল গঠন, পটপরিবর্তনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের নানান বিষয় উল্লেখ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

চূড়ান্ত খসড়ার পটভূমিতে ‘১৯৭৬ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়’ লেখা ছিল। চূড়ান্ত ভাষ্যে এর স্থলে ‘১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়’ লেখা হয়েছে।

খসড়া সনদের পটভূমির আরেক অংশে লেখা হয়েছিল, ‘২০০৬ সালে কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও তৎপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।’ চূড়ান্ত ভাষ্যে লেখা হয়, ‘২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বইঠা তাণ্ডবে দেশে কয়েকটি নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১/১১ সরকার নামে পরিচিত। ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়।’

সন্নিবেশিত নতুন বাক্যে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রকাঠামোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অবারিত সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিগত ১৬ বছরে দলীয় প্রভাবকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর, জবাবদিহিবিহীন ও বিচারহীনতার সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।’

খসড়ায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়ে বলা হয়, শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু-নারীসহ প্রায় এক হাজার নাগরিক নিহত হয়। চূড়ান্ত ভাষ্যে এক হাজারের জায়গায় ‘সহস্রাধিক’ বলা আছে। এ ছাড়া ‘জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী শাসক ও তার দোসরেরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়’—এই বাক্যের ‘স্বৈরাচারী শাসকের’ স্থলে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ ও ‘পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়’ শব্দগুচ্ছের আগে ‘অনেকেই’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে।

খসড়ায় সংস্কার কমিশন গঠন অংশে বলা হয়, বিদ্যমান সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রেরিত প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। চূড়ান্ত ভাষ্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার প্রথমে ৩ অক্টোবর পৃথক প্রজ্ঞাপনে পাঁচটি কমিশন গঠন করে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব করতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো খসড়ায় কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া উল্লেখ ছিল না। জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
সূত্র : আজকের পত্রিকা

্রিন্ট

আরও সংবদ