খুলনা | শনিবার | ১৮ অক্টোবর ২০২৫ | ২ কার্তিক ১৪৩২

কয়রার দুই নদী থেকে অব্যাহতভাবে বালু তোলায় ঝুঁকির মুখে ভেড়িবাঁধ

কয়রা প্রতিনিধি |
১১:১৮ পি.এম | ১৭ অক্টোবর ২০২৫


কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ নদ থেকে অব্যাহতভাবে বালু তোলায় চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে এলাকার নদী তীরবর্তি ভেড়িবাঁধ। প্রতিনিয়তই এসব বাঁধ ধসে গিয়ে ভাঙনের শঙ্কা তৈরী হচ্ছে। বালু তোলা বন্ধের দাবীতে সম্প্রতি এলাকাবাসি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এছাড়া প্রশাসনের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও থামানো যাচ্ছে না বালু দস্যুদের। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি। 
গত বৃহস্পতিবার কয়রা উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কপোতাক্ষ নদ থেকে একটি ড্রেজার ও ২ জন বালু দস্যুকে আটক করে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে ১৫ দিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে একটি ড্রেজারসহ ৪ বালু দস্যুকে আটকের পর এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এরপরও বালু তোলা বন্ধ হয়নি। 
স্থানীয়রা জানিয়েছেন হারুন গাজী ওরফে বালু হারুন নামে এক যুবলীগ কর্মীর নেতৃত্বে কয়রায় বালু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তিনি এর আগে কয়রা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের প্রশ্রয়ে বালুর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় যুবদলের আহবায়ক শরিফুল আলমের প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোস্তাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এলাকার বালুর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন স্থানীয় যুবদলের আহক্ষায়ক শরিফুল আলম। এলাকার চিহ্নিত বালু দস্যুরা এখন তার প্রশ্রয়ে থেকে অবৈধভাবে নদীর বালু লুট করছে। এতে নদী তীরবর্তি বাঁধে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। 
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম শেখ অভিযোগ করেন তার ওয়ার্ডের গোবরা, ঘাটাখালি ও হরিণখোলা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত কাজে বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। ওই কাজে বালু সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন যুবদলের নেতারা। তারা ৫টি ড্রেজার দিয়ে দিনরাত ঝুকিপূর্ণ বাঁধের ৫০ মিটার দূর থেকে বালু তুলে ঠিকাদারকে দিচ্ছেন। ঠিকাদারের লোকজন সেই বালু বস্তায় ভরে আবার নদীতে ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। এটা জঘন্য কাজ হচ্ছে উলে­খ করে তিনি বলেন এখনই এই বালু দস্যুদের থামাতে না পারলে বাঁধের ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনবিভাগের স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, শাকবাড়িয়া নদীর এক পাড়ে সুন্দরবন আরেক পাড়ে লোকালয়। লোকালয়ের বাঁধ সংস্কার কাজের বালু সরবরাহের জন্য কয়রা যুবদলের একজন প্রভাবশালী নেতা শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু তোলার অনুমতি নিতে তার কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বাঁধ ও সুন্দরবনের ক্ষতি হবে বলে অনুমতি দেননি। তবুও জোর করে শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 
জানতে চাইলে কয়রা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শরিফুল আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন বালু তোলার সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত নয়। তবে বাঁধ সংস্কার কাজে একটি পক্ষ বালু সরবরাহ করছেন বলে জানান তিনি। কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুললাহ আল বাকী বলেন এখানে কোন বালুমহল নেই। যে কারণে এখানকার যে কোন স্থান থেকে বালু তোলা অবৈধ। অবৈধ এ কাজ বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন এই অবৈধ কাজে যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ