খুলনা | শনিবার | ১৮ অক্টোবর ২০২৫ | ৩ কার্তিক ১৪৩২

মায়ানমারে চলে যাচ্ছে বিপুল সার পাচার ঠেকাতে হবে

|
১১:৪২ পি.এম | ১৭ অক্টোবর ২০২৫


দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে বোরো ধান। ডিসেম্বরেই শুরু হয় বোরো চাষাবাদের প্রস্তুতি। প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ সারের। অন্যান্য ফসলেও সারের প্রয়োজন হয়।
অথচ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে জানা যায়, দেশ থেকে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে সার পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার সীমান্তপথ দিয়ে মায়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে ইউরিয়া সার উদ্বেগজনক হারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উখিয়ায় দুই ডিলারের গুদাম থেকে পাচারের জন্য রাখা ৬০৭ বস্তা সার উদ্ধার করেছে। মায়ানমারে পাচার হওয়ায় কক্সবাজারে সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, দেশে প্রায় ৬৫ লাখ টন সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া, সাড়ে সাত লাখ টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট) এবং সাড়ে আট লাখ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য সারের চাহিদা প্রায় আট লাখ টন। এর মধ্যে দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয় ৯-১০ লাখ টন।
বাকি সব সার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এসব সার ভর্তুকি দিয়ে অনেক কম মূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। আর সেই সার পাচার হয়ে যাওয়া দুই দিক থেকে ক্ষতিকর। প্রয়োজনের সময় কৃষক ডিলারের কাছ থেকে ভর্তুকি মূল্যে সার পান না এবং বাজার থেকে বেশি মূল্যে সার কিনতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং অনেক কৃষক জমিতে প্রয়োজনীয় সার দিতে না পারায় উৎপাদন কম হয়।
অন্যদিকে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির অর্থ গচ্চা যায়। কক্সবাজারে সরকারের নিয়োজিত ডিলার রয়েছেন ১৬৮ জন। জানা যায়, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই কোনো না কোনোভাবে সার পাচারে বা পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। সার পাচারে জড়িতদের একটি বড় অংশ উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গা শ্রমিক। ডিলারদের মধ্যে ২৮ জন রয়েছেন, যাঁরা বিসিআইসি ও বিএডিসি উভয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই ডিলার নিযুক্ত হয়েছেন, যা অবৈধ। একজন একটি সংস্থারই ডিলারশিপ নিতে পারেন। তাঁরা দ্বিগুণ সার বরাদ্দ পান এবং একটি বরাদ্দ পুরোই পাচার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, কক্সবাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা ইউরিয়ার দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা। সীমান্ত পার করতে পারলেই রাখাইনে তার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই হাজার টাকার বেশি। অর্থাৎ প্রতি বস্তায় লাভ এক হাজার ২০০ টাকার বেশি। তাই চোরাকারবারিরা রীতিমতো বেপরোয়া। এ কারণে কক্সবাজারে যে সারের সরকারি মূল্য ২৭ টাকা, তা এখন কৃষকদের কিনতে হয় ৪০ টাকা বা তারও বেশি দাম দিয়ে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সার, ওষুধ, খাদ্য, সিমেন্টসহ জরুরি সব পণ্য মায়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর বদলে আসছে ইয়াবা, আইসসহ বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের মাদক, যা দেশের তরুণসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেকোনো মূল্যে এই চোরাচালান ঠেকাতে হবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীর সমন্বয়ে মায়ানমার সীমান্তে সর্বোচ্চ নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ