খুলনা | শনিবার | ১৮ অক্টোবর ২০২৫ | ৩ কার্তিক ১৪৩২

আহত ২০ ‘জুলাইযোদ্ধা’ ঢামেকে

মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ রণক্ষেত্র, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৮ এ.এম | ১৮ অক্টোবর ২০২৫


জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় জুলাই যোদ্ধারা। সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।এ সময় পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশের ব্যারিকেডের জন্য ব্যবহৃত ‘রোড ব্লকার’ গুলো একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে  দেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে এমপি হোস্টেলের সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। 
শুক্রবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারীরা সড়কে থাকা টায়ার ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ে বর্তমানে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এমনকি সাধারণ মানুষের হাঁটা চলাও বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংসদ ভবনের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।
‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে সকালে থেকে উত্তেজনা দেখা দেয় সংসদ ভবন এলাকায়। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও জুলাই আহত বীর হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়াসহ ৩ দফা দাবিতে সকাল থেকে অবস্থান নেন জুলাই যোদ্ধারা।  
এই পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ ভবন এলাকার ১২ নম্বর গেটে বর্তমানে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গেট বন্ধ করে দেন যাতে আন্দোলনকারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা গেটের সামনে অবস্থান করে ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন এবং গেট খুলে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সংসদ ভবনের এলাকায় এবং অনুষ্ঠান স্তরের আশপাশে একে একে আসেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ থেকে শুরু করে র‌্যাব, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা সম্পূর্ণ এলাকা ঘিরে ফেলেন। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সংসদ ভবনে ১২ নম্বর গেট থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ মানিক মিয়া এভিনিউ জুড়ে এবং অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে রাখেন।
এ সময় আন্দোলনকারী জুলাই যোদ্ধারের একটি গ্র“প আড়ংয়ের দিকে, আরেকটি গ্র“প খামার বাড়ির দিকে অবস্থান করছে। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছে পুলিশ।
তবে বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষরিত অনুষ্ঠান ঘিরে সকালে থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সংসদ ভবন এলাকায়। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও জুলাই আহত বীর হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ ৩ দফা দাবিতে সকাল থেকে অবস্থান নেন তারা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জুলাই সনদে তাদের স্বীকৃতি থাকবে জানিয়ে তাদের সরে যাওয়ার আহŸান জানালেও আন্দোলনকারীরা আগের অবস্থান চালিয়ে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের সংসদ ভবন এলাকা থেকে সরিয়ে দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
আহত ২০ ‘জুলাইযোদ্ধা’ ঢামেকে : জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন-আতিকুল গাজী (২০), সাইফুল ইসলাম (২৬), লাইলী আক্তার (২৫), কামরুল হাসান (২৯), শরিফুল ইসলাম (২৯), সিনথিয়া (২১), আশরাফুল (২০), হাবিবউল­াহ (৩০), শফিউল­াহ (৩২), শাকিব (২৫), মো. লিটন (৩২), তানভীর (২২), দুলাল (৩০), কামাল (৩২), ওমর ফারুক (২৭), নুরুল হুদা (২৫), আখের উদ্দিন (২৮), মিজান (২৮), মোস্তাক বিপ্লব (২৭) ও আল আমিন (৩৪)।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ ফারুক বলেন, ‘আহতদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।’
আহতদের মধ্যে একজন, জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে ডান হাত হারানো আতিকুল গাজী বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা আন্দোলন করে আসছিলাম। সরকার আমাদের দাবিতে সাড়া না দিয়ে আজ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করতে গেলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে দাঁড়াই। তখন হঠাৎ পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং দোকানপাট সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

্রিন্ট

আরও সংবদ