খুলনা | রবিবার | ১৯ অক্টোবর ২০২৫ | ৩ কার্তিক ১৪৩২

‘টেস্ট টুয়েন্টি’ নামে ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ; যেভাবে খেলা হবে

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০২:১৪ পি.এম | ১৮ অক্টোবর ২০২৫


ক্রিকেটে শুরু হতে যাচ্ছে একদম নতুন এক অধ্যায়, নাম ‘টেস্ট টুয়েন্টি’। এই ফরম্যাটে টেস্ট ক্রিকেটের কৌশলগত গভীরতা আর টি–টোয়েন্টির গতি ও উত্তেজনা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অনন্য সংমিশ্রণ। ধারণাটি এসেছে ভারতীয় ক্রীড়া উদ্যোক্তা গৌরব বাহিরওয়ানি’র মাথা থেকে, যিনি ‘দ্য ওয়ান ওয়ান সিক্স নেটওয়ার্ক’-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান।

নতুন এই ফরম্যাটে প্রতিটি দল ব্যাট করবে দুই ইনিংসে- প্রতিটি ইনিংস ২০ ওভার করে। অর্থাৎ একদিনেই শেষ হবে পুরো ম্যাচ, যেখানে থাকবে টেস্টের মতো ফলাফল- জয়, পরাজয়, টাই বা ড্র। এতে লাল বলের গভীরতা যেমন থাকবে, তেমনি ছোট ফরম্যাটের গতি ও উত্তেজনাও থাকবে একসঙ্গে। ডিজিটাল যুগের দর্শক ও খেলোয়াড়দের কথা মাথায় রেখে তৈরি এই টেস্ট টুয়েন্টিকে বলা হচ্ছে ক্রিকেটের “চতুর্থ ফরম্যাট”, যা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সেতুবন্ধন ঘটাবে।

সাধারণ টি–টোয়েন্টির মতো শুধু দ্রুত রান তোলাই নয়, টেস্ট টুয়েন্টিতে গুরুত্ব পাবে পরিকল্পনা ও ধৈর্য। ম্যাচ চলবে মোট চারটি সেশনে- প্রতিটি ২০ ওভারের, যেখানে সেশনগুলোর মাঝে থাকবে কৌশল সাজানোর বিরতি। আয়োজকরা বলছেন, “টি–টোয়েন্টির সময়সীমায় টেস্ট ম্যাচ ভাবনা” যেখানে ব্যাটারদের ধৈর্য, বোলারদের কৌশল, আর দলীয় পরিকল্পনার মিশেল ঘটবে সম্প্রচারের উপযোগী ফরম্যাটে।

এই নতুন ধারণার পেছনে আছে ক্রিকেট দুনিয়ার বড় বড় নাম। ‘টেস্ট টুয়েন্টি’র পরামর্শক বোর্ডে রয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, স্যার ক্লাইভ লয়েড, ম্যাথিউ হেইডেন ও হরভজন সিং- যারা প্রত্যেকেই নিজেদের যুগে ক্রিকেটে ছাপ রেখে গেছেন। ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, এটি “উদ্দেশ্যপূর্ণ উদ্ভাবন”, যা তরুণ প্রজন্মকে “নতুন স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোর সুযোগ” দেবে। লয়েডের মতে, ক্রিকেট সবসময় পরিবর্তিত হয়েছে, তবে এত “বিবেচনাপূর্ণভাবে” নয়—এটি ক্রিকেটের শিল্প ও ছন্দে আধুনিকতার নতুন প্রাণ দিচ্ছে।

হেইডেন একে বলছেন দুই যুগের সেতুবন্ধন যেখানে তরুণরা ক্লাসিক ক্রিকেটের স্বাদ পাবে, তবে হারাবে না আধুনিক উত্তেজনা। আর হরভজন সিংয়ের মতে, এটি ক্রিকেটের নতুন হৃদস্পন্দন, যা অতীতের ঐতিহ্যকে যুক্ত করবে বর্তমান প্রজন্মের উচ্ছ্বাসের সঙ্গে।

ফরম্যাটটির বাস্তবায়ন তদারকির দায়িত্ব পেয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের সাবেক সিইও মাইকেল ফোর্ডহ্যাম, যিনি এখন ‘টেস্ট টুয়েন্টি’-র চিফ অপারেটিং অফিসার। শুধু নতুন ফরম্যাট নয়, ‘টেস্ট টুয়েন্টি’ তৈরি হচ্ছে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের জন্য আয়োজন করা হবে জুনিয়র টেস্ট টুয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ, যা ৫০টিরও বেশি দেশে অনুষ্ঠিত হবে। এখান থেকেই গড়ে উঠবে পেশাদার ক্রিকেটের পরবর্তী প্রজন্ম।

বাহিরওয়ানির ভাষায়, লক্ষ্য হলো একটি সিস্টেম” গড়ে তোলা যেখানে যোগ্যতার ভিত্তিতে, লিঙ্গ বা অঞ্চল নির্বিশেষে, প্রতিটি প্রতিভাবান ক্রিকেটার সুযোগ পাবে। তথ্য বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করে রাখা হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিভা পুলে।

‘টেস্ট টুয়েন্টি’র প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌসুম শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। অংশ নেবে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি- তিনটি ভারতের এবং তিনটি আন্তর্জাতিক দল, যেগুলোর ঘাঁটি হবে দুবাই, লন্ডন এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহরে (যা এখনো ঘোষণা করা হয়নি)। প্রতিটি দলে থাকবে ১৬ জন খেলোয়াড়- ৮ জন ভারতীয় ও ৮ জন বিদেশি। নিলামের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে মোট ৯৬ জন ক্রিকেটার, পাশাপাশি ২০৪ জন খেলোয়াড় থাকবেন “ওয়াইল্ডকার্ড পুলে”, যারা মৌসুম চলাকালেই দলে ডাক পেতে পারেন।

সবশেষে বলা যায়, লাল বলের ঐশ্বর্য আর ছোট ফরম্যাটের রোমাঞ্চকে এক মঞ্চে নিয়ে আসতে যাচ্ছে ‘টেস্ট টুয়েন্টি’। এটি শুধু নতুন ফরম্যাট নয়—বরং ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সাহসী রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি, যেখানে অতীতের সম্মান বজায় রেখে ভবিষ্যতের পথ তৈরি হচ্ছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ