খুলনা | সোমবার | ২০ অক্টোবর ২০২৫ | ৪ কার্তিক ১৪৩২

স্বাক্ষরিত হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দ্রুততর হোক

|
১১:৪৮ পি.এম | ১৯ অক্টোবর ২০২৫


দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। ২৪টি রাজনৈতিক দলের ৪৮ জন প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে সনদে সই করেন। এরপর সই করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ কমিশনের সদস্যরা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চারটি বাম দল। গণফোরামও সনদে স্বাক্ষর করেনি। দলগুলো চাইলে পরেও এই সনদে স্বাক্ষর করতে পারবে বলে আগেই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমাদের নবজন্ম হলো। সারা পৃথিবীর জন্য একটি বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসার প্রমাণ।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে, যেন আমরা বলতে পারি যে আমাদের বহু স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা।’
অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় ছিল ব্যাপক উত্তেজনা। জুলাই যোদ্ধারা তিন দফা দাবি নিয়ে সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন। তাঁদের এই অবস্থান-আন্দোলন দুপুরে সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশি হামলায় অর্ধশতাধিক জুলাই যোদ্ধা আহত হন। এ কারণে বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ও আশপাশে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরও একে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে বিক্ষোভ করেন জুলাই যোদ্ধারা।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে উলে­খ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, আজকে তার একটি নিদর্শন দেখা গেল।’ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান শুক্রবার ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় এক শ্রমিক সমাবেশে বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ পিটিয়ে ও টিয়ার শেল ছুঁড়ে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা জাতির জন্য লজ্জাকর।”
সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে প্রণীত ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদের তিনটি ভাগের মধ্যে প্রথম ভাগে পটভূমি, দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে সনদ বাস্তবায়নের সাত দফা অঙ্গীকার রয়েছে। এই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন। কিছু সংস্কার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে কিছু দলের ভিন্নমত ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে।
আমরা মনে করি, জুলাই সনদ জাতির আকাক্সক্ষার ফসল। অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব সনদ বাস্তবায়ন করা হবে-এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ