খুলনা | মঙ্গলবার | ২১ অক্টোবর ২০২৫ | ৫ কার্তিক ১৪৩২

বিজেএ নির্বাচন : জামায়াত-আ’লীগ প্যানেলের ভরাডুবি

চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে নেতৃত্বে বিএনপি’র অনুসারীরা

এন আই রকি |
০১:১৬ এ.এম | ২১ অক্টোবর ২০২৫


বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন (বিজেএ) নির্বাচনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনে অর্ডিনারী গ্র“পে ১২টি পদের মধ্যে মাত্র ১জন জয়লাভ করেছে জামায়াত-আ’লীগ প্যানেল থেকে। অন্য ১১টি পদে জয়লাভ করেছে বিএনপিপন্থী প্যানেল থেকে। এদিকে সোমবার অর্ডিনারী ও এসোসিয়েট গ্র“পের ১৮ জন সদস্য বিজেএ’র চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর সংগঠনটির চেয়ারম্যান পদসহ বেশির ভাগ পদে বিএনপিপন্থী সমর্থকরা নির্বাচিত হয়েছেন।  
দেশের কাঁচাপাট রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের  (বিজেএ) নির্বাচন গত ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে অবশ্য এসোসিয়েট গ্র“পের ছয় জন ব্যবসায়ী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়। এরপর বিজেএ নিয়ন্ত্রণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে একাধিক গ্র“প। যার ফলে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ একটি প্যানেলে এবং বিএনপি ও সাবেক পাট ব্যবসায়ীরা মিলে আরেকটি প্যানেল করেন অর্ডিনারী গ্র“পের জন্য। অবশ্য সাবেক পাট ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেরই ঋণ খেলাপী, দুদকের মামলাসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ ছিল। ১৮ অক্টোবর অর্ডিটারী গ্র“পের ১২টি পদের বিপরীতে ২৫ জন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ১১ জনই জয়লাভ করে বিএনপিপন্থী প্যানেল থেকে। নির্বাচনে আলৌকভাবে পরাজিত হয় বগুড়ার জেলার দক্ষিণ চেলোপাড়ার গ্রামের বাসিন্দা টিপু সুলতান। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ খেলাফীসহ দুদকের মামলা রয়েছে। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার আস্থাভাজন এবং ভোটকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ ভোটার তৈরি করার পরও তার পরাজয়ে বিজেএ অঙ্গণে নানান কথা রটেছে। শুধু তার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার বিজেএ’র ভোটার বেড়ে যায় প্রায় চার গুণ।
নির্বাচনে জামায়াত-আ’লীগের প্যানেলে ছিলেন খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের এপিএস এফ এম সাইফুজ্জামান মুকুল, গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান, খুলনা-৩ আসনের জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের আস্থাভাজন গাজী শরীফুল ইসলাম। তাদের বিপরীতে প্যানেলে ছিলেন দুদকের মামলার আসামী আলোচিত ব্যবসায়ী টিপু সুলতান এবং খন্দকার আলমগীর কবির, বিজেএ’র সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফরহাদ আকন্দ পম্পি, এবং দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে জামায়াত-আওয়ামী লীগ প্যানেলের ১১ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন জয়লাভ করে। বিএনপিপন্থী গ্র“প ১১টি পদে জয় পায়। 
এদিকে সোমবার দুপুরে বিজেএ’র নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে অর্ডিনারী ও এসোসিয়েট গ্র“পের নির্বাচিত ১৮ জন পরিচালক ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ মেয়াদের সদস্য থেকে চেয়ারম্যান পদে খন্দকার আলমগীর কবির, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে এস এম সাইফুল ইসলাম পিয়াস এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোঃ তারেক আফজালকে সমর্থন করলে তারা তিনজনই বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা হলেন মোঃ ফরহাদ আহমেদ আকন্দ, শামীম আহমেদ, এস এম মনিরুজ্জামান পলাশ, খাইরুজ্জামান, মোঃ কুতুব উদ্দিন, শেখ ইমাম হোসেন, এস এম হাফিজুর রহমান, বদরুল আলম মার্কিন, এইচ এম প্রিন্স মাহমুদ, মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন, মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, মোঃ নূর ইসলাম, মোঃ আলমগীর খান, রঞ্জন কুমার দাস এবং এস এম সাইফুল ইসলাম। 
আরও জানা যায়, ২০০৯-১১ সালের বিজেএর নির্বাচনে চেয়ারম্যান ছিলেন বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন। এরপর থেকে চার বছর মামলার জটিলতার কারণে নির্বাচন হয়নি। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত  বিজেএ’র চেয়ারম্যান ছিলেন দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের ঘনিষ্ঠ থাকায় নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুর রাজ্জাক আকন্দের ছেলে ফরহাদ আকন্দ পম্পি ২০২৩-২০২৫ সালের জন্য বিজেএর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর বিজেএ’র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি পন্থী নেতা খন্দকার আলমগীর কবির। তার আপন ভাইও নগরীর একটি ওয়ার্ড বিএনপি’র শীর্ষ পদে রয়েছেন। 
এই বিষয়ে দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত বিজেএ’র সদস্য শেখ ইমাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন পর বিজেএতে বিএনপি নেতারা ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে ৮০ ভাগ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। যেহেতু এটা ব্যবসায়ীক সংগঠন সুতরাং সব ধরনের লোক এখানে আছে। 
বিজেএ’র নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খন্দকার আলমগীর কবির জানান, আমি বিএনপি’র সমর্থক এবং আমার পরিবারও। দীর্ঘদিন থেকেই আমরা বিএনপি’র পাশে আছি। সকলের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছে। আগামী দুই বছর পাট ব্যবসায়ীদের পাশে থাকতে চাই। তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করতে চাই। আমার এই সংগঠন থেকে চাওয়ার কিছু নেই। সবার সহযোগিতায় সংগঠন ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করতে পারলেই খুশী হবো।

্রিন্ট

আরও সংবদ