খুলনা | বুধবার | ২২ অক্টোবর ২০২৫ | ৭ কার্তিক ১৪৩২

সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল রক্ষায় যুব সমাজের দাবি ও কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
১১:৩৬ পি.এম | ২১ অক্টোবর ২০২৫


সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল রক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানির অধিকার নিশ্চিতকরণে দাবিসহ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সাতক্ষীরা ইয়ুথ এলায়েন্স। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টায় শহরের সুলতানপুর আজাদী সংঘ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি শেখ মুসফিকুর রহমান দাবিসহ এই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত একটি জলাধার। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী ১৮৬০ থেকে ১৮৬৫ সালের দিকে শহরের উন্নয়ন, নৌযান চলাচল এবং কৃষিকাজের সুবিধার্থে এই খালটি খনন করেন। তার নামানুসারেই এর নামকরণ করা হয় ‘প্রাণসায়ের খাল’। একসময় খালটি মরিচ্চাপ নদী থেকে বেতনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এটি ছিল নৌযান চলাচল, সেচ ও স্থানীয় বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। শহরের পানি নিষ্কাশন, কৃষি উৎপাদন এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। কিন্তু বর্তমানে খালটি অবৈধ দখল, আবর্জনা ফেলা, বাজারের বর্জ্য এবং অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত ও মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। 
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে খালটিতে সিমিত আকারে পানি প্রবাহ রয়েছে। কিন্তু সংযোগ খালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে, যার ফলে শহরে জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। নিয়মিত খনন না হওয়ায় খালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, খালটি শুধু একটি জলপথ নয় এটি সাতক্ষীরা শহরের ঐতিহ্য, পরিচয় এবং পরিবেশগত ভারসাম্যের প্রতীক। এর পুনরুদ্ধার শহরের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
ইয়ুথ এলায়েন্সের সভাপতি আরও বলেন, সা¤প্রতিক সময়ে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তর উদ্যোগ নিলেও তা এখনো স্থায়ী ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো খাল পাড়ে বসবাসকারি বাসিন্দারা তাদের গৃহস্থলির বর্জ্য এই খালে ফেলেন। সুলতানপুর বড়বাজারের মাংস ব্যবসায়ি ও মাছ ব্যবসায়িরা তাদের বর্জ্য সরাসরি খালের মধ্যে ফেলে দূষিত করছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও মনিটরিংয়ে স্তৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুঅভাবে খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খালের নান্দনিকতা ফিরিয়ে আনতে দুইপাড়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম হাতে নেওয়ার আহŸান জানানো হয়। পাশাপাশি যথাযথ স্থানে ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চালুর দাবি জানানো হয়।
তারা বলেন, স্থানীয় যুব সমাজ ও নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ে খালের পরিচর্যা ও উন্নয়নের জন্য একটি তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে। এছাড়া দূষণকারী স্থাপনা, বিশেষ করে বড়বাজারের কসাইখানা খালের পাশ থেকে স্থানান্তর করতে হবে। খালের সংযোগ খালগুলো অবমুক্ত করা এবং এই বিষয়ে জনমত গঠন করাও জরুরি বলে উলে­খ করা হয়। 
ইয়ুথ এলায়েন্স জানায়, আগামী ২৩ অক্টোবর নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, যুব সংগঠন ও স্থানীয় জনগণকে নিয়ে একটি “মুভমেন্ট কর্মসূচি” পালন করা হবে। একই দিনে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
সভাপতি শেখ মুসফিকুর রহমান বলেন, প্রাণসায়ের খাল রক্ষার এই আন্দোলন শুধু একটি পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নয়, এটি আগামী প্রজন্মের টিকে থাকার সংগ্রাম। প্রশাসন, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও নাগরিক সমাজ একসাথে কাজ করলে খাল আবারও ফিরে পেতে পারে তার হারানো নান্দনিকতা ও জীবনীশক্তি। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, সাতক্ষীরা শহর হোক প্রাণবন্ত, নান্দনিক ও দূষণমুক্ত। সবাই মিলে এই আন্দোলনকে সফল করতে হবে। এসময় সংগঠনের সহ-সভাপতি হোসেন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কর্ণ বিশ্বাস কেডি উপস্থিত ছিলেন। 

্রিন্ট

আরও সংবদ