খুলনা | বুধবার | ২২ অক্টোবর ২০২৫ | ৭ কার্তিক ১৪৩২

অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচতে চাইছেন মামুন: শেখ হাসিনার আইনজীবী

খবর প্রতিবেদন |
০৫:০৬ পি.এম | ২২ অক্টোবর ২০২৫


অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বাঁচতে চাইছেন বলে উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনার আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ নিজের মক্কেলদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা উল্লেখ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ যুক্তিতর্ক শুরু হয়।

সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে আজ যুক্তি খণ্ডন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী। রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়া চৌধুরী মামুনের প্রসঙ্গ আসতেই তিনি এমন মন্তব্য করেন। আমির হোসেন বলেন, ‘উনি (মামুন) তো নিজে বাঁচার জন্য অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচতে চাইছেন।’ তার এ কথার প্রত্যুত্তরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘তো নিজে বাঁচার জন্য অন্য লোকেরা আসে না কেন? এই যে এত আসামি, তারা আসে না কেন?’

জবাবে আমির হোসেন বলেন, ‘উনি তো নিজে বাঁচার জন্য নিজের ভুলত্রুটিকে গোপন করে অন্যের ওপর দায় দিচ্ছেন।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘উনি তো গোপন করেননি। নিজের দোষ স্বীকার করেছেন।’

তখন আমির হোসেন বলেন, ‘হয়তো সব স্বীকার করেছেন। আবার স্বীকার না-ও করতে পারেন। সেটার বিবেচনা মাননীয় আদালতের।’ এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সেটা প্রমাণ হয়েছে আমরা বলছি না, কিন্তু তিনি বলেছেন। আপনি বললেন যে বলেননি। প্রাইম মিনিস্টারের অর্ডারগুলো কীভাবে পাস হয়েছে, সার্কুলেটেড হয়েছে— আমি সে বিষয়ে বলছি।’

প্রত্যুত্তরে রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, ‘আমার কথা হলো প্রাইম মিনিস্টার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এমন কথা বলেছেন… বলেননি। অতএব এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও যদি বলে থাকেন আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে। এমন কোনো বক্তব্য কি এসেছে?’ তখন প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়, ‘আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল ওয়েপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।’ প্রত্যুত্তরে আমির হোসেন বলেন, ‘আইজিপি সাহেব তো নিজে বাঁচার জন্য অনেক কিছুই বলেছেন। সেটাকে আমি ডিনাই করি।’

ট্রাইব্যুনালে বলেন, ‘সেটা আমরা দেখবো যে উনার এটা ট্রু কিনা। উনার যে কন্ডিশন ছিল সেটা ফুলফিল হয়েছে কিনা।’

একপর্যায়ে ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া রাজসাক্ষী মামুনের সাক্ষ্য সামনে নিয়ে আসেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সম্পর্কে আমি খুব বেশি কথা বলব না। কারণ, উনি যা যা বলেছেন নিজেকে বাঁচার জন্য বলেছেন। সাক্ষীকে আমি ডিনাই করছি। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সময় তাকে আড়াই ঘণ্টা সময় দিয়েছেন লার্নেড ম্যাজিস্ট্রেট। তাকে চিন্তাভাবনা করার জন্যই এ সময় দেওয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি।’

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে তৃতীয় দিনের মতো চলছে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। তার যুক্তিতর্ক আজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে। তবে, নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

্রিন্ট

আরও সংবদ