খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | ৭ কার্তিক ১৪৩২

টাইফয়েডের টিকা নিয়ে গুজব : সরকারকে ইতিবাচক প্রচার বাড়াতে হবে

|
১২:৩১ এ.এম | ২৩ অক্টোবর ২০২৫


মারাত্মক পানিদূষণ, উচ্চ জনঘনত্ব, কার্যকর স্যানিটেশনের ঘাটতিসহ নানা কারণে বাংলাদেশ টাইফয়েড জ্বরের উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ একটি দেশ। ২০২১ সালের জরিপ থেকে জানা যায়, প্রতিবছর দেশে ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৮ হাজার মানুষ, যাদের ৬৮ শতাংশই শিশু। দেখা যাচ্ছে, শিশুদের ক্ষেত্রে টাইফয়েড অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টাইফয়েড প্রতিরোধি টিকা দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা অত্যন্ত সময়োচিত সিদ্ধান্ত।
কিন্তু উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এই টিকা নিয়ে একশ্রেণির মানুষ নানা ধরণের গুজব ছড়াচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যে। এই অপপ্রচার ও গুজব মোকাবিলার করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা যে ধরনের ইতিবাচক প্রচার দরকার, তার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এতে সরকার টিকা দেওয়ার যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, সেটা অর্জনে বাধা তৈরি হতে পারে।
খবর জানাচ্ছে, ১২ অক্টোবর টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এ ক্যাম্পেইন চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারে ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে দুই কোটি শিশু নিবন্ধনের আওতায় আসে। এর মধ্যে টিকা নিয়েছে ১ কোটি ৪ লাখের বেশি শিশু। অন্যান্য টিকার মতো টাইফয়েডের টিকা নেওয়ার স্থান লালচে হওয়া, সামান্য ব্যথা, মৃদু জ্বর, ক্লান্তি ভাবের মতো সামান্য কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। টাইফয়েডে সব বয়সীরা আক্রান্ত হলেও শিশু ও কম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। একসময় টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীদের ৩০ শতাংশই মারা যেত, এন্টিবায়েটিক আবিষ্কারের কারণে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে সবচেয়ে বিপদের জায়গা হলো টাইফয়েডের জীবাণু ওষুধপ্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে টিকা হতে পারে টাইফয়েড থেকে সুরক্ষার অন্যতম একটি কার্যকর উপায়।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ইপিআইয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশে টাইফয়েডের যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষিত ও অনুমোদিত টিকা। বাংলাদেশে এই টিকা প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে, এমনটিও নয়। ২০১৯ সালে পাকিস্তানে, ২০২২ সালে নেপালে শিশুদের টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হয়েছে। টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম দেশ।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে উগ্র ডানপন্থী ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীর বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। এই বিরোধিতা অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচারে রূপ নেয়। এর আগে কোভিড ভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রেও একই ধরনের গুজব ও অপপ্রচার দেখা গেছে। কিন্তু আশার বিষয় হচ্ছে, টিকা নেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সফল একটি দেশ। ১৯৭৯ সালে শুরু হওয়া ইপিআই কার্যক্রমে এখন ১১টি টিকা দেওয়া হয়। প্রতিবছর প্রায় ৪২ লাখ শিশুকে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাতে প্রায় ১ লাখ শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, টিকা ক্যাম্পেইনের সাফল্য নির্ভর করে এর প্রচারণার ওপর। একসময় টেলিভিশন ও রেডিওতে ব্যাপক প্রচারণার ফলে সাধারণ মানুষের ভেতরে টিকাসংক্রান্ত সচেতনতা ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠায় এবং এখানে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর সুযোগ থাকায় সরকারকে অবশ্যই প্রচারণার কৌশল উন্নত ও হালনাগাদ করতে হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টাইফয়েডের টিকা নিয়ে ইতিবাচক প্রচার বাড়াতে হবে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

্রিন্ট

আরও সংবদ