খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | ৭ কার্তিক ১৪৩২

এআই কন্টেন্টের ৬৮ শতাংশ আ’লীগ কেন্দ্রিক : বাংলা ফ্যাক্ট

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৪ এ.এম | ২৩ অক্টোবর ২০২৫


কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ও বিভিন্ন বাহিনীকে ঘিরে বেশির ভাগ অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকারি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান বাংলা ফ্যাক্ট। বুধবার এআই-সৃষ্ট ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু ও রাজনৈতিক ঝোঁক নির্ণয় করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিসরে এআই-নির্ভর প্রপাগান্ডার ধরন ও ঝুঁকি অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট-চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলা ফ্যাক্ট ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত— এই তিন মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এআই কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানায়।
বাংলা ফ্যাক্ট জানায়, এতে দেখা গিয়েছে-রাজনৈতিক দল, সরকার এবং বাহিনী (পুলিশ ও সেনাবাহিনী) নিয়ে বেশি এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগকে নিয়ে। তবে আওয়ামী লীগকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া অপতথ্যগুলো আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা, অপরদিকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সরকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া অপতথ্যগুলোর ধরন নেতিবাচক।  
তাদের প্রতিবেদন বলছে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে কনটেন্টের ৬৮ শতাংশ আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক, ১৭ শতাংশ বিএনপি, ৯ শতাংশ জামায়াত, ৬ শতাংশ এনসিপি। আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত কনটেন্ট ইতিবাচক, অন্য দলগুলোকে নিয়ে কেবল নেতিবাচক প্রচারণা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী বা পুলিশ, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত কন্টেন্টগুলো প্রধানত নেতিবাচক। এছাড়া দুর্ঘটনা ও লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল বিষয়ও লক্ষ্য করা গেছে বলে জানায় বংলা ফ্যাক্ট।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, শনাক্তকৃত এআই-সৃষ্ট অপতথ্যগুলো ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার) এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছিল। একাধিক কনটেন্ট একের অধিক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গেছে। এটা অপতথ্যগুলোর প্রচারের বহুমাত্রিক ও সমন্বিত বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ফেসবুকে, সেখানে মোট ৬১টি কনটেন্ট (প্রায় ৮৬ শতাংশ) শনাক্ত করা হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে টিকটক, যেখানে ৪০টি কনটেন্ট (প্রায় ৫৬ শতাংশ) পাওয়া গেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে তুলনামূলকভ কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতিবেদন বলছে, কন্টেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর বা প্রপাগান্ডামূলক বার্তা প্রচারে ভিডিও ফরম্যাট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। স্যাম্পল হিসেবে সংগ্রহ করা মোট ৭১টি কন্টেন্টের মধ্যে ৫৭টি ছিল ভিডিও-কেন্দ্রিক এবং ১৪টি ছিল ছবি-কেন্দ্রিক।
নমুনাগুলোর ৪৯ শতাংশ ভিডিওতে রাজনৈতিক দল সম্পর্কিত কন্টেন্ট পাওয়া গেলেও, সবগুলোই ছিল চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ছিল আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে, ১৭ শতাংশ বিএনপি, ৯ শতাংশ জামায়াত এবং ৬ শতাংশ এনসিপিকে নিয়ে। যদিও এই কন্টেন্টগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যা প্রচারিত হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই আওয়ামী লীগের পক্ষের। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত কন্টেন্টগুলো দিয়ে দলটির ভূমিকা ও ভাবমূর্তিকে ইতিবাচক করে দেখানোর প্রবণতা ছিল।
তবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে কেবল নেতিবাচক প্রচারণাই ছিল। অর্থাৎ, এআই-সৃষ্ট অপতথ্যগুলো দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা করতে দেখা যায়, বিপরীতে বাকি দলগুলো নিয়ে কেবল নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
রাজনৈতিক দল, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার, জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত কন্টেন্টগুলো বিশ্লেষণ করা দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ ব্যতীত সবাইকে নিয়েই নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে যেসব এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেখানে বাহিনী বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে জড়িয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সম্পর্কিত প্রচারণা দেখা গিয়েছে। যেমন-গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের শ্লোগানের ভিডিও। তবে ভিডিওটি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
একই রকম নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা গিয়েছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার, এর প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিয়ে। আলোচিত নমুনাগুলোর মধ্যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কিত যে ১২টি (প্রায় ১৭ শতাংশ) কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে, তার সবগুলোই নেতিবাচক।

্রিন্ট

আরও সংবদ