খুলনা | শুক্রবার | ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৮ কার্তিক ১৪৩২

ইয়াবার ভয়াল থাবা রোধে চোরাচালান থামাতে হবে

|
১২:১৯ এ.এম | ২৪ অক্টোবর ২০২৫


সীমান্ত এলাকা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা এখন মাদকের ভয়াবহ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুই উপজেলায় রয়েছে ইয়াবা পাচারের ৬০টি সক্রিয় হটস্পট। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রতিনিয়ত আসছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, যার একটি বড় অংশ মজুদ করা হচ্ছে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। এসব শিবির থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে। তরুণসমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে এই মরণনেশা।
প্রতিবেদনে জানা যায়, কমপক্ষে ১০টি চক্র এই পাচারে জড়িত এবং উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এর বড় অংশ। নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নৌপথে নিরীহ জেলেরা বাধ্য হচ্ছেন পাচারে ব্যবহৃত হতে। এর ফলে একদিকে দেশের যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে, অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হচ্ছে। মাদক পাচারের এই ভয়ংকর স্রোতের উৎস মায়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্য, যেখানে মাদক কারখানাগুলো এখনো সক্রিয়। একসময় মায়ানমার জান্তার পরোক্ষ সমর্থনে চলত ইয়াবার চোরাচালান। এখন রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে থাকলেও মাদক চোরাচালান বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তাদের সাংগঠনিক ব্যয় নির্বাহের জন্য এই মাদক কারবারে যুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বিশেষ করে আরসার অন্যতম সংগঠক নবী হোসাইনের নেতৃত্বে বাংলাদেশে ইয়াবার বড় চালান ঢুকছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিশেষ করে বিজিবি তাদের কঠোর অবস্থান বজায় রাখলেও বন্ধ হচ্ছে না মাদক আসা। বড় মাদক কারবারিরা অধরাই থেকে যাচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিজিবি প্রায় ৪৭ লাখ পিস এবং কোস্ট গার্ড প্রায় ৩০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। বিপুল পরিমাণ এই উদ্ধার প্রমাণ করে চোরাচালানের মাত্রা কতটা বিশাল।
এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সমন্বিত জাতীয় কৌশল-যেখানে বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময় হবে দ্রুত ও কার্যকরভাবে। পাশাপাশি মাদক উৎপত্তিস্থল মায়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আরো শক্ত অবস্থান নেওয়া জরুরি।
সবশেষে সমাজকেও সচেতন হতে হবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে মাদকবিরোধী প্রচারণায় যুক্ত করা দরকার। প্রয়োজন হবে দীর্ঘমেয়াদি নীতি, যা অর্থনৈতিক বিকল্প, সামাজিক পুনর্বাসন ও কূটনৈতিক চাপে গড়ে উঠবে। ইয়াবার আগ্রাসন এখনই না ঠেকালে এর বিষ আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গ্রাস করবে সম্পূর্ণভাবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ