খুলনা | শুক্রবার | ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৮ কার্তিক ১৪৩২

ইভিএম বাতিল, ‘না ভোট’ ফিরলো প্রার্থীর দেশি-বিদেশি আয়ের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক : সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী যুক্ত

আরপিও সংশোধন : জোটের প্রার্থী হলেও ভোটে লড়তে হবে নিজ দলের প্রতীকে

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৮ এ.এম | ২৪ অক্টোবর ২০২৫


নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
আরপিওতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
অনুমোদিত খসড়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংশোধিত আরপিওর নানা দিক তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যদি নির্বাচনী জোট হয়, তাহলে জোটের অংশ হলেও দলের যে প্রতীক, তা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে সংজ্ঞা, সেখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কিত যেসব বিধান ছিল, সেগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে পারবেন না, এটিও যুক্ত করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আরপিওতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা। পাশাপাশি ‘না ভোট’ পুনর্বহাল করা হয়েছে, যাতে কোনো নির্বাচনী আসনে কেবল একজন প্রার্থী থাকলে ভোটাররা তাকে ভোট না দেওয়ার সুযোগ পান। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের সাজানো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই এই বিধান আনা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে ভোটাররা যদি তাকে পছন্দ না করেন, ‘না ভোট’ দিতে পারবেন। তখন সেই আসনে পুনরায় নির্বাচন হবে।
নতুন সংশোধনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পলাতক আসামিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। জনগণ যেন সহজেই জানতে পারেন তাদের প্রার্থীর আর্থিক অবস্থা কী।
আইন উপদেষ্টা বলেন, যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁদের অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে যত আয় ও সম্পত্তি আছে, তার সবকিছুর বিবরণ দিতে হবে।
সংশোধনীর মধ্যে আরো রয়েছে, নির্বাচনী জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। জেলা নির্বাচনী কার্যালয় জেলার নির্বাচনী কর্মকর্তা ঠিক করবেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান বা চাঁদা দিতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং অনুদানদাতার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভোটার ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ডাক ভোটে ভোট দিতে পারবেন। ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো এলাকার ভোট বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। 
আইন উপদেষ্টা জানান, জোটের প্রার্থীদের প্রতীক ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে বিধান যোগ করা হয়েছে, যাতে ভোটাররা সহজেই বুঝতে পারেন-কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।
সংশোধিত আরপিওতে ‘না’ ভোটের বিধান রাখার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে সংসদীয় আসনে একজন প্রার্থী থাকবেন, সেখানে ভোটাররা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন। আর কোনো সংসদীয় আসনে অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ