খুলনা | সোমবার | ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | ১১ কার্তিক ১৪৩২

পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপনের রেট দ্বিগুণ হচ্ছে, সাংবাদিকদের বেতন বাড়াতে হবে : তথ্য উপদেষ্টা

নভেম্বরেই উপদেষ্টা পরিষদের শেষ সভা

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৬ এ.এম | ২৭ অক্টোবর ২০২৫


অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভা নভেম্বরেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এছাড়া পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপনের রেট দ্বিগুণ হচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের বেতন বাড়াতে হবে বলেও জানিয়েছেন মাহফুজ। রোববার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে মাহফুজ আলম এ তথ্য জানান। ডিআরইউ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যে প্রস্তাব, তার মধ্যে মোট ২৩টি প্রস্তাব ছিল আশু করণীয়, যেটা এই সরকারের সময়সীমার মধ্যে করা সম্ভব। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আমলারা পর্যালোচনা করে মোট ১৩টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা খুব শিগগির দেখা যাবে। তিনি বলেন, ‘এগুলো যে খুব বড় কিছু, এ রকম নয়। কিন্তু আমাদের যে সময়সীমা আছে, তখন তো ছিল তিন মাস। এখন তো আর হয়তো এক মাস আছে। কারণ, এই যে জিনিসগুলো করা হবে, সেটা ক্যাবিনেটেই করতে হবে। অথবা নীতিমালা বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে করতে হবে। সেটা আমরা নভেম্বরের পরে আর করতে পারব না। কারণ, নভেম্বরেই ক্যাবিনেট ক্লোজ হয়ে যাবে, ক্যাবিনেট মিটিংটা। এরপর নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আর সম্ভবত ক্যাবিনেট মিটিং বসে না।
মিট দ্য রিপোর্টার্সে নামসর্বস্ব সংবাদ পত্রিকা, সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নির্বাচনে এআই প্রপাগান্ডাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। নামসর্বস্ব পত্রিকার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় এসব পত্রিকার তালিকা তৈরি করেছে। সাংবাদিকদের সমর্থন পেলে গত এক বছরে এক দিনও ছাপা হয়নি, এমন পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। এ সময় তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা কমানো এবং বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানোর পক্ষে। বিজ্ঞাপনের হার যেটা আছে, সেটার দ্বিগুণ করে দেয়া হবে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে সত্যিকারের প্রচারসংখ্যা দেখাতে হবে। তিনি বলেন, এই সুবিধা পেতে সংবাদপত্রকে সাংবাদিকদের জন্য সরকারের নির্ধারিত বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। এই বেসিক স্যালারি (মূল বেতন) না দেওয়া হলে কোনো পত্রিকা সুবিধা (বিজ্ঞাপনের হার) পাবে না। এই সরকারের প্রতিশ্র“তি ছিল, গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের দৌরাত্ম কমানো উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, এ কাজে খুব সফল না হলেও যতটুকু করা যায়, সেই চেষ্টা করা হয়েছে। যেহেতু সরকার শেখ মুজিবের মতো মিডিয়া বন্ধ করতে চায় না, তাই কোনো মিডিয়া বন্ধ করা হয়নি। সংবাদপত্র সাবস্ক্রিপশন
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়া হবে। আমরা সরকার থেকে সুবিধা দেবো, জনগণের টাকায় ৯০০ টাকার বদলে ১৮০০ টাকা বিজ্ঞাপন দেবো, কিন্তু আপনি সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন দেবেন না-এতে যে নৈতিক সংকট তৈরি হয় তাতে সাংবাদিকরা এখানে-ওখানে খ্যাপ মারে, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির মধ্যে ঢুকে যায়। এটা বন্ধের জন্য অবশ্যই সাংবাদিকদের ডিগনিফাইড লাইফ দিতে হবে। 
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাইব বিজ্ঞাপনের হার বাড়–ক। কিন্তু এই সুবিধা আমরা দেবো, এর জন্য আমরা সাংবাদিকদের জন্য একটা বেসিক স্যালারি স্ট্রাকচার প্রস্তাব করে যেতে চাই। সাংবাদিকদের যদি এই বেসিক স্যালারি না দেয়া হয়, তাহলে ওই পত্রিকা আমরা বা আউটলেটকে আমরা এই সুবিধা দেবো না। পত্রিকা মালিক ও সম্পাদকরা যদি ইমিডিয়েটলি এটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেন, তাহলে আমরা এই সংস্কারের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব। 
পত্রিকার প্রচারসংখ্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ৩ লাখ বলা হয়, অথচ বাস্তবে ১ লাখ ৫০ হাজার হয়, তাহলে তারা নির্দিষ্ট হারে বিজ্ঞাপন পাবে না। বড় পত্রিকা বা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত কিছু পত্রিকা ফোন করে বাড়তি বিজ্ঞাপন পায়- এই অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই, ন্যায্যতা বজায় রেখে হার বাড়–ক, কিন্তু ভুয়া প্রচারসংখ্যা যেন না দেখানো হয়।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘টেলিভিশন মিডিয়া একটা প্রস্তাব করেছে। এটাও শর্ত সাপেক্ষ করে দেবো, আমরা ডিজিটাইজেশন করব। টেলিভিশন মিডিয়া ডিজিটাইজেশন হলে কয়েকশ কোটি টাকা রেভিনিউ বাড়বে টেলিভিশনের। এতে টিভি নেটওয়ার্কে যারা কাজ করেন, যারা মালিক বা ব্যবসায়ী তারাও উপকৃত হবেন। ডিজিটাইজেশনের কারণে প্রত্যেকটা টেলিভিশন তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ভালো বিজ্ঞাপন পাবে। এই সুবিধাও আমরা দেবো এই শর্ত সাপেক্ষে যে সাংবাদিকদের একটা বেসিক স্যালারি দিতে হবে, যেটার একটা লিমিট আমরা ঠিক করতে চাই। এরপর আপনারা ইনক্রিমেন্ট দেবেন। তথ্য উপদেষ্টা জানান, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় বর্তমানে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় একটি অধ্যাদেশ এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য বিধিমালা প্রণয়নের কাজ করছে। 
তিনি বলেন, আগামী বছরের ফেব্রæয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। নভেম্বরের পর মন্ত্রিসভার বৈঠক আর হবে না, তখন সরকার নির্বাচন কমিশনের অধীনে তার ভূমিকা পালন করবে। আমরা নভেম্বরের মধ্যেই অধ্যাদেশগুলো প্রণয়ন করতে চাই। তিনি আরও জানান, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যও বিধিমালা তৈরির কাজ করছে। এটি আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, সরকার সাংবাদিকতায় নৈতিকতা দেখতে চায়। এজন্য সাংবাদিকদের বেতন বাড়ানো জরুরি। তিনি আরও বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য ওয়েবসাইট চালু হয়েছে, যেখানে কপিরাইট লঙ্ঘন করে অন্য মিডিয়ার সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। তিনি সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কপিরাইট মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 
‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ