খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | ১২ কার্তিক ১৪৩২

ব্যাংক খাতে আতঙ্ক : গ্রাহকের অনিশ্চয়তা দূর করুন

|
১২:০৮ এ.এম | ২৮ অক্টোবর ২০২৫


দেশের ব্যাংক খাতে গভীর সংকট চলছে, বিশেষ করে পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক-এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের লাখ লাখ গ্রাহকের মধ্যে যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সংকটের কঠিন চিত্র উঠে এসেছে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে তা তুলতে না পারা শুধু আর্থিক নয়, মানসিক কষ্টেরও কারণ। আরো ভয়াবহ হলো মেয়াদ শেষে প্রতিশ্র“ত মুনাফা না দিয়ে কম হারে অর্থ ফেরত দেওয়ার মতো অনৈতিক ও বেআইনি আচরণ।
এক্সিম ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক জুয়েল আচার্য্য ও তাঁর স্ত্রীর ঘটনাটি তারই সা¤প্রতিক ও বেদনাদায়ক উদাহরণ। ছয় বছরে দ্বিগুণ হওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংকটি তাঁকে দিচ্ছে অর্ধেকেরও কম মুনাফা। এর ফলে একদিকে ভেঙে পড়ছে সাধারণ গ্রাহকের আর্থিক নিরাপত্তা, অন্যদিকে ধসে পড়ছে ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা, যা একটি অর্থনীতির প্রাণশক্তি। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অভিযোগ অনুযায়ী, এই ব্যাংকগুলোর সাধারণ গ্রাহকরা সামান্য কয়েক হাজার টাকাও তুলতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে, ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ ‘বাইরে চলে যাওয়া’র যে তথ্য অর্থ উপদেষ্টা দিয়েছেন, তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ আমানতকারীদের।সংকট সমাধানে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে নতুন ‘ইন্টার ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ বা ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি’ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে কেবল একীভূতকরণই যথেষ্ট নয়, আমানতকারী ও কর্মীদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মূল সমস্যা-অর্থ আত্মসাৎ ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাঁদের সম্পদ জব্দ ও বিক্রি করে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে হবে। এই সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ উপদেষ্টার জরুরি, কার্যকর ও দৃশ্যমান হস্তক্ষেপ ছাড়া গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।
ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় অবিলম্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক। অর্থ আত্মসাৎকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তি, সম্পদ জব্দ ও ক্ষতিপূরণ আদায় করা ছাড়া আস্থা ফিরবে না।অর্থনীতি কেবল বিনিয়োগ বা উৎপাদনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না, এর ভিত হলো বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস আজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এখন প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরলেই কেবল আমানতকারীর মুখে হাসি ফিরবে, আর অর্থনীতির ভিত্তিও হবে দৃঢ়।

্রিন্ট

আরও সংবদ