খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | ১২ কার্তিক ১৪৩২

‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে’

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা বন্ধ করার দাবিতে বামজোটের সমাবেশ

খবর বিজ্ঞপ্তি |
০১:৪৪ এ.এম | ২৮ অক্টোবর ২০২৫


চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার বিকাল ৫টায় নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাম জোটের খুলনা জেলা কমিটির সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা সদস্য সচিব কোহিনুর আক্তার কনার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন সিপিবির জেলা সভাপতি এস এ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল হান্নান, বাসদ জেলা আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জেলা সাধারণ সম্পাদক গাজী নওশের আলী, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ডাঃ সমরেশ রায়, কাজী দেলোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান মিঠু, সিপিবি জেলা সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির, শ্রমিক নেতা এইচ এম শাহাদাৎ, মহানগর সাধারণ সম্পাদক এড. নিত্যানন্দ ঢালী, বাসদ খুলনা জেলা সদস্য আব্দুল করিম, এড. সনজিত মন্ডল প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভ‚তভাবে ঘোষণা করেছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, পতেঙ্গার লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে আরও দুটি টার্মিনাল পতেঙ্গার টার্মিনাল-১ এবং বে টার্মিনাল-২ এই দুই টার্মিনালও বিদেশিদেরকে ইজারা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা, মাতারবাড়ি এই ৪টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। বন্দরের সাথেই নৌ-ঘাটি, তেল সোধনাগার, বিমান বন্দরের মতো গুরুত্বপ‚র্ণ ও কৌশলগত স্থাপনা রয়েছে। এর ফলে জাতীয় সম্পদের নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পটভ‚মি তৈরি হচ্ছে, তাতে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। 
বক্তারা বলেন বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর ইজারা দিলে তারা পরিচালনা, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং প্রবেশাধিকারসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। দেশ যদি দুর্বল হয় আর বিদেশি কোম্পানি যদি সবল হয় তাহলে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিদেশিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে ভবিষ্যতে বন্দর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ হলো নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি। এই টার্মিনাল তৈরি হয়েছে দেশের অর্থে এবং দেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় এনসিটি দিয়ে। পণ্য উঠানামার আধুনিক সব উপকরণ ও যন্ত্রপাতি রয়েছে এই টার্মিনালে। বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে এই টার্মিনাল। ফলে এই নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের হৃদপিন্ড। অথচ সেই হৃদপিÐকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে যেমন জিম্মি হয়ে পড়বে আমাদের দেশ, তেমনি জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ডিপি ওয়াল্ডের পিছনেই আছে মার্কিন সরকার কারণ এদের সাথে মার্কিন নৌ-বাহিনীর চুক্তি রয়েছে। ঐ চুক্তির বলে মার্কিন নৌ-বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে রিফুয়েলিং ও মেরামতের জন্য নোঙ্গর করতে পারবে, যা খুবই ভয়ংকর। এটি ভ‚রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নীল নক্শা। দেশের স্বার্থেই এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহŸান জানান নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ সরকারকে বন্দর ইজারা দেয়ার দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে ফিরে আসার জোর দাবি জানান। 
সমাবেশ থেকে বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ৮ নভেম্বর ২০২৫ চট্টগ্রামে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের সমাবেশ ও গণর‌্যালি অনুষ্ঠানের ঘোষণা সফল করার আহŸান দেওয়া হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ