খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩ কার্তিক ১৪৩২

নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ঘিরে ফ্যাসিস্টের প্রেতাত্মারা সরব : বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৫২ এ.এম | ২৮ অক্টোবর ২০২৫


আওয়ামী বলয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর ঢাকায় গোপনে সভা করে ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি লিয়াকত শিকদারের সহযোগী সিরাজুল হক চৌধুরীকে বিএনপি ট্যাগ দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মে পরিচালিত এ বিশ্ববিদ্যালটি হাতে রাখতে প্রথমে মিজানুর রহমানকে টাস্টি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে আরো দু’জন ট্রাস্টি অন্তর্ভুক্ত হয়। 
জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু হলে সিরাজুল হক চৌধুরী নিরুপায় হয়ে এক অফিস আদেশে তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, পবিত্র কুমার সরকার এবং সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহকে সাময়িক বিরত থাকার নির্দেশসহ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিকে তৎকালীন চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরী প্রভাবিত করার চেস্টা করলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন বের হয়ে আসে। আর্থিক কেলেংকারীসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমান মেলে। বিষয়টি এখনো ইউজিসির তদন্তাধীন। 
সূত্রগুলো জানায়, মূলত একটি চক্রের উদ্দেশ্য ছিল পলাতক ট্রাস্টিদের টাকা সরবরাহ এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে অর্থ যোগান। এতে সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামালসহ পলাতক আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতাদের সাথে গোপনে যোগাযোগ রেখেছেন অর্থদাতা সিরাজুল হক চৌধুরীসহ অভিযুক্ত ট্রাস্টিরা। 
সূত্রগুলো আরও জানায়, ২০২৩ সালে মেয়র নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল আদেশে সভা করে তালুকদার খালেকের জন্য শিক্ষক- কর্মকর্তা কর্মচারীদের অর্থ প্রদানের প্রমাণ মিলেছে তদন্ত রিপোর্টে। ইতোমধ্যে দুদক অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে এ বছরের জানুয়ারি মাসে। প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি তে এখনো সমাবর্তন হয়নি, শুরু হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ। 
জানা যায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে কাজ হাত দেন মিজানুর রহমান কিন্তুবাধ সাধেন সিরাজুল হক চৌধুরী। অভিযুক্ত তিন ট্রাস্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। অথচ এই তিন ট্রাস্টির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের পাশাপাশি ২০২৩ সালে বিএনপির সমাবেশে হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে; যার প্রধান আসামী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। জয়েন্ট স্টক হতে প্রেরিত চিঠিতে দেখা যায় সিরাজুল হক চৌধুরীকে যে সভায় চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়; সেখানে সদস্যদের স্বাক্ষরের গড়মিল রয়েছে। অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা শাহিদা খানম কে রেজিস্ট্রার এর দায়িত্ব দেন। পূর্বের রেজিস্ট্রারকে ১ দিনের নোটিশে অব্যাহতি দেন। পরবর্তীতে একটি অনৈতিক ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলে ঘটনায় জড়িত দুজনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন দমাতে শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদানের অভিযোগে সিরাজুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমি স্থায়ী ক্যম্পাস নির্মাণের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যত বাধাই আসুক, আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল কে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ এগোব। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় টি স্বৈরাচার দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে, যা দূর করতে সময় লাগছে। আমার সময়ে ১ টাকা অনিয়ম করতে আমি কাউকে দিবনা। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মধ্যে অভিযুক্ত ট্রাস্টিরা ঢাকায় গোপনে বিভিন্ন সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সকলের চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বৈরাচার মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক গতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকুক।

্রিন্ট

আরও সংবদ