খুলনা | বুধবার | ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩ কার্তিক ১৪৩২

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে যে শর্তে স্বাক্ষর করবে এনসিপি

জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়ালে হিতে বিপরীত হবে : নাহিদ

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৯ এ.এম | ২৯ অক্টোবর ২০২৫


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতার লোভে কোনো দল বা কোনো শক্তি যদি মনে করে তারা এককভাবে সবকিছু করবে, এই জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে বা জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীতে দাঁড়াবে, তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদ টেকাতে পারবে না। সরকার টেকাতে তাদের কষ্ট হবে। জনগণের যে আস্থা সেই আস্থা তারা পাবে না। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে ‘সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। জুলাই সনদ যেদিন স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয় সেদিনই আমরা স্পষ্ট করেছি। আমরা বলেছি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান কেবলই একটা আনুষ্ঠানিকতা। কেবলই কাগজে সাইন। যার মূল্য কেবলই কাগুজে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও ত্রিদলীয় জোটের রূপরেখা দেখেছিলাম। যেটা মূলত ছিল জনগণের সঙ্গে একটা প্রতারণা। ৯০-এর পুনরাবৃত্তি আমরা আর বাংলাদেশে হতে দেব না। এ কারণে আমরা এখনো সনদ স্বাক্ষর করিনি। আমরা বলেছি আমরা স্বাক্ষর করতে চাই।
শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাপলা না দেওয়ার বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের একটা স্বেচ্ছাচারিতা। নির্বাচন কমিশন কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই তাদের মনোবাসনা চাপিয়ে দিতে চায়। আমরা ধরে নেব নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়। নির্বাচন কমিশন ন্যায়বিচার করতে সক্ষম নয়। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। গায়ের জোরে পরিচালতি হচ্ছে। ফলে এ ধরনের একটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না সে বিষয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন তৈরি হবে। আমাদের মনেও প্রশ্ন তৈরি হবে। কিন্তু আমরা বলছি- শাপলা নিয়ে যদি আমাদের আইনি ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তাহলে আমরা যেকোনো প্রতীক নিতে প্রস্তুত আছি।
নাহিদ বলেন, আমরা মনে করছি এখানে আইনি কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এটি আদায় করে নিতে হচ্ছে। যদি নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহণ করতে বাঁধা দেওয়ার একটা পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র হিসেবে দেওয়া না হয় তাহলে রাজপথই আমাদের একমাত্র জায়গা হবে। কিন্তু আমরা সেটা চাই না। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে ইলেকশনের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে আগাতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি। যদি আমাদের জোটে যেতে হয়, জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে অবশ্যই একটা নীতিগত জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। জুলাই সনদ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক জায়গা। জুলাই সনদ বা সংস্কার বিষয়ে আমরা দেখব কারা বাংলাদেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে এবং আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। সেই জায়গা থেকে জোটের বিষয়ে বা কোনো ধরনের নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি না। কিন্তু যদি সংস্কারের বিপক্ষে কেউ দাঁড়ায়, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের যেরকম আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাহলে এই ধরনের কোনো শক্তির সঙ্গে জোটে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকবার ভাবতে হবে।
আগামী নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা চাই দ্রæত সময়ের মধ্যে ফেব্র“য়ারির যে টাইম লাইন ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে নির্বাচন হোক। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি না হয়। সেজন্য সব পক্ষকে কাজ করতে হবে। ফ্যাসিবাদী যারা রয়েছে, যারা পতিত শক্তি রয়েছে, তারা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। নির্বাচনকে ঘিরে তাদের অনেক বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে স্বাক্ষরের বিষয়ে কয়েকটি শর্তের কথা জানিয়েছে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এসব শর্তের মধ্যে নোট অব ডিসেন্ট বাতিলসহ সংবিধা সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশগুলো লিপিবদ্ধ করার কথা রয়েছে। লিপিবদ্ধ হলেই জুলাই সনদে এনসিপি স্বাক্ষর করবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে ‘‘নোট অব ডিসেন্ট’’ বলে কোনো বিষয় থাকবে না। সংবিধান সংস্কার বিষয়ে ঐক্যমত্য কমিশন যে বিষয়ে একমত হয়েছে তা গণভোটে যাবে এবং জনগণ রায় দিবে। এবং সে বিষয়গুলো সংবিধানে পরিবর্তন হবে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দ্বিতীয়ত আমরা বলেছি, গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হবে এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বৈধতার জায়গা থেকে এ আদেশটা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জারি করতে হবে। ফলে ঐক্যমত্য কমিশন যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে করবে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে স্বাক্ষর করবে এনসিপি।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কারের বিপক্ষে কেউ দাঁড়ায় বা ইতিহাসে দায়ভার রয়েছে এমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এনসিপির জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হবে।’
তিনি জানান, আগের পদ্ধতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন হবে। আমরা চাই নির্বাচনের যে টাইমলাইন দেয়া হয়েছে তার মধ্যেই নির্বাচন হোক।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘শাপলা প্রতীক না দেয়ার বিষয়টি এনসিপিকে থামিয়ে দেয়া এবং নির্বাচনি যাত্রা দেরি করাতে গড়িমসি করছে নির্বাচন কমিশন। তারা গায়ের জোরে কাজ করছে। রাজনৈতিক ভাবে যদি শাপলা আদায় করতে হয় তাহলে রাজপথের মাধ্যমে আদায় করা হবে।
ফ্যাসিবাদী শক্তি, নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র করছে বলেও জানান তিনি। উচ্চ-কক্ষ পিআর চাই বলেও জানিয়েছে এনসিপির এই নেতা।
এর আগে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ভারতের আধিপত্য বিরোধী রাজনীতিতে জামাত ও বিএনপি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে না। চাঁদাবাজি বন্ধের ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি শক্তিশালী দল হিসেবে অংশ নিতে চাই। সংসদে থাকতে চাই। কারণ কোনো দল যদি এককভাবে সংসদ গঠন করে সে সংসদ বেশিদিন টিকবে না।’

্রিন্ট

আরও সংবদ