খুলনা | বৃহস্পতিবার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ১৫ কার্তিক ১৪৩২

সুন্দরবনের নির্বিচার শামুক লুট এখনই থামান

|
১১:৪৮ পি.এম | ২৯ অক্টোবর ২০২৫


সুন্দরবন-সংলগ্ন নদী ও খাল থেকে নির্বিচার শামুক-ঝিনুক আহরণ নতুন হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এটি শুধু নদীর জীববৈচিত্র্যকেই বিপন্ন করছে না। এটি সামগ্রিক প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যও এক মারাত্মক হুমকি। খবর বলছে, প্রতিদিন ট্রলার ও নৌকা নিয়ে শামুক উত্তোলন করে ট্রাকে ও নদীপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় এই কর্মকাণ্ডে লিপ্ত অসাধু চক্র অবৈধ ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করছে। বন ও জলজ সম্পদ সংরক্ষণ আইন অনুসারে নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে শামুক বা ঝিনুক আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয়। তবু আইন কার্যকর হচ্ছে না। প্রশাসনিক তৎপরতার অভাব ও নজরদারির ঘাটতি এই অপরাধকে উৎসাহিত করছে।
শামুক-ঝিনুক নদীর তলদেশের মাটি ও পানির গুণগত মান বজায় রাখে। এগুলো নদীর প্রাকৃতিক ছাঁকনি বা ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। দূষণ কমায়। মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। মাছ, কাঁকড়াসহ জলজ প্রাণির খাদ্যচক্র ধরে রাখে। এসব শামুক-ঝিনুকের নির্বিচার নিধন চলতে থাকলে খাদ্যচক্রের ক্ষয়, মাছ ও কাঁকড়ার সংখ্যা হ্রাস এবং নদীর পরিবেশের ধ্বংস অবধারিত। শামুক আহরণে যুক্ত প্রান্তিক জেলেদের মানবিক বাস্তবতা এই সংকটের বিশেষ দিক। কয়রা অঞ্চলে লোনাপানি ঢুকে পড়ায় সেখানকার অধিকাংশ জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চাষাবাদের সুযোগ হারিয়ে বহু পরিবার নিঃস্ব অবস্থায় রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে অসাধু চক্র হতদরিদ্র নারী-পুরুষকে শামুক আহরণের কাজে নামিয়ে দিয়েছে। এতে প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং মানবসৃষ্ট দারিদ্র্য একাকার হয়ে সেখানে ভিন্নমাত্রার সামাজিক ও পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি করছে।
এ সমস্যা সমাধানে নিয়মিত ও ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে অবৈধ শামুকনিধন ঠেকানো এবং আইনের পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বনসংলগ্ন ও উপকূলীয় অঞ্চলে সচেতনতা বাড়িয়ে স্থানীয় জনগণকে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। এর পাশাপাশি দরিদ্র জেলেদের জন্য চাষাবাদ, ইকোট্যুরিজম, চিংড়ি বা ছোট জলজ ফার্মিংয়ের মতো বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করতে হবে, যাতে তাঁরা ন্যায়সংগত উপার্জনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী ও মর্যাদাশীল জীবনযাপন করতে পারেন। সার্বিকভাবে এই উদ্যোগগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করবে না; বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক দায়িত্বের বাস্তব প্রতিফলনও নিশ্চিত করবে। পরিবেশ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের এই সমন্বিত নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে শুধু সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব হবে না, স্থানীয় জনগণও ন্যায়সংগত জীবিকা উপার্জন করতে পারবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ