খুলনা | বৃহস্পতিবার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ১৫ কার্তিক ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের নতুন বাণিজ্য চুক্তি, শুল্ক কমল ১০ শতাংশ

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৯ পি.এম | ৩০ অক্টোবর ২০২৫


দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে শীর্ষ বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, চীনের সঙ্গে এক বছরের জন্য বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‍“আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে।” খবর রয়টার্সের।

ট্রাম্প জানান, চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চুক্তির অংশ হিসেবে বিরল খনিজ সম্পর্কিত জটিল ইস্যুটিও সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগামী এপ্রিলে ট্রাম্প চীন সফরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এর পরবর্তী কোনো এক সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। বৈঠক শেষে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, “বৈঠকটি ছিল অসাধারণ। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বুসানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং। বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচনায় যাওয়ার আগমুহূর্তেই দুই নেতার মধ্যে হয়েছে সৌজন্যমূলক আলাপ, কূটনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথন।

ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় শি বলেন, “আপনাকে আবার দেখে খুবই ভালো লাগছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আপনার পুনর্নির্বাচনের পর আমরা ফোনে তিনবার কথা বলেছি, একে অপরকে বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছি এবং সবসময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছি।”

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমাদের দুই দেশের ভিন্ন জাতীয় বাস্তবতা রয়েছে। ফলে সব বিষয়ে একই দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কথা নয়। বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে মাঝে মাঝে বৈরিতা হওয়াটাও স্বাভাবিক।” তিনি যোগ করেন, ‍“কয়েক দিন আগেই দুই দেশের বাণিজ্য আলোচকরা পারস্পরিক মূল উদ্বেগগুলো সমাধানে একটি মৌলিক ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত করতে আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহী।”

চীনের মুদ্রা ইউয়ান বৃহস্পতিবার ডলারের বিপরীতে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা শিগগিরই প্রশমিত হবে। ইতোমধ্যে ওয়াল স্ট্রিট থেকে টোকিও পর্যন্ত বিশ্বের প্রধান শেয়ারবাজারগুলো সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নতুন রেকর্ড গড়েছে।

এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে ট্রাম্প বারবার চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এর আগে রোববার কুয়ালালামপুরে দুই দেশের আলোচকরা সমঝোতার ইঙ্গিত দেওয়ার পর থেকেই এই আশাবাদ জোরালো হয়।

তবে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার নানা ইস্যুতে দুই দেশই এখন আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। ফলে এই সম্ভাব্য বাণিজ্য সমঝোতা কতদিন টিকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

চলতি মাসে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাপ আবারও বেড়েছে। বেইজিং উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে ব্যবহৃত বিরল খনিজ রফতানিতে নতুন করে কঠোর সীমাবদ্ধতার প্রস্তাব দেয়। এই খাতে চীনের প্রায় একচেটিয়া প্রভাব রয়েছে।

এর জবাবে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার ব্যবহার করে তৈরি পণ্যের চীনে রফতানিতেও নতুন বিধিনিষেধ আরোপের ইঙ্গিত দেন তিনি। এসব পদক্ষেপ কার্যকর হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারত।

বুসানে নামার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প লেখেন, ‘জি-টু বৈঠক শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে।’ অন্য এক পোস্টে তিনি জানান, চীনের বাড়তে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কার্যক্রম জোরদার করবে। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

ওয়াশিংটন আশা করছে, বিরল খনিজ রফতানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখবে বেইজিং
সপ্তাহান্তে শীর্ষ বাণিজ্যকর্মীদের ব্যস্ত আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, বেইজিং এক বছরের জন্য বিরল খনিজ রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ বিলম্বিত করতে পারে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সয়াবিন ক্রয়ও আবার শুরু করবে চীন। এসব পদক্ষেপ দুই দেশের নেতাদের আলোচনায় গৃহীত হতে যাওয়া একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোর’ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সম্মেলনের আগেই চীন কয়েক মাস পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। হোয়াইট হাউস আশা করছে, ট্রাম্প ও শির এই বৈঠক আগামী বছরে আরও কয়েকটি শীর্ষ বৈঠকের সূচনা করবে। এতে দুই দেশের পারস্পরিক সফরের সম্ভাবনাও রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার ইঙ্গিত দেয়।

তবে ট্রাম্প দ্রুত কিছু অগ্রগতি চান। বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ী মহল নিবিড়ভাবে এই আলোচনার দিকে নজর রাখছে।

বুধবার ট্রাম্প বলেন, চীন ফেন্টানিল তৈরির রাসায়নিক উপাদান নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিলে তিনি চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর আশা করছেন। ফেন্টানিল নামের এই মারাত্মক কৃত্রিম মাদক যুক্তরাষ্ট্রে অতিমাত্রায় মৃত্যুর প্রধান কারণ।

ট্রাম্প আরও জানান, টিকটক নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা মালিকানা না বদলালে এই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

শুল্ক ও বিরল খনিজ বিষয়ক আগের চুক্তির মেয়াদ শেষের পথে
আগের চুক্তিগুলোর মেয়াদ ১০ নভেম্বর শেষ হবে। এসব চুক্তির ফলে পাল্টা শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ শতাংশ ও চীনে ১০ শতাংশে নেমে এসেছিল এবং চীন থেকে বিরল খনিজ চুম্বক রফতানিও আবার শুরু হয়।

বেসেন্ট জানিয়েছেন, চীন ফেন্টানিলের উপাদান রফতানি কমাতে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী ছাড় দেবে, তা তিনি জানাননি।

বেইজিং ২০ শতাংশ ফেন্টানিল শুল্ক প্রত্যাহার, সংবেদনশীল মার্কিন প্রযুক্তি রফতানিতে শিথিলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বন্দর ফি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। এসব ফি চীনের জাহাজ নির্মাণ ও পণ্য পরিবহন খাতে প্রভাব কমাতে আরোপ করা হয়েছিল।

ট্রাম্পের এশিয়া সফরের শেষ পর্যায়ে শির সঙ্গে এই বৈঠক হচ্ছে। সফরে তিনি জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বিরল খনিজ বিষয়ক চুক্তি করেছেন, যাতে এই খনিজের ওপর চীনের প্রভাব কমানো যায়।

তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা
আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনা দুই নেতার বৈঠকের পটভূমিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বেইজিং তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ অংশীদার এবং প্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র।

চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, সম্প্রতি চীনা এইচ–৬কে বোমারু বিমান তাইওয়ানের কাছে ‘সামরিক মহড়া’ চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠক নিয়ে তাইওয়ানের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, ট্রাম্প দ্বীপটি নিয়ে চীনের প্রতি ছাড় দিতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে তাইওয়ানের আত্মরক্ষার জন্য সহায়তা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

্রিন্ট

আরও সংবদ