খুলনা | শুক্রবার | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৬ কার্তিক ১৪৩২

মুম্বাইয়ে জিম্মিদশা, নাটকীয় অভিযানে ১৭ শিশুকে উদ্ধার, পুলিশের গুলিতে নিহত অভিযুক্ত যুবক

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫০ এ.এম | ৩১ অক্টোবর ২০২৫


ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের একটি স্টুডিওতে অন্তত ১৭ শিশুকে জিম্মি করেছেন এক ব্যক্তি। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই শিশুদের উদ্ধার করেছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে শিশুদের জিম্মি করা রোহিত আর্য নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের পোওয়াই এলাকার আরএ স্টুডিওতে এই জিম্মিদশার ঘটনা ঘটেছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুম্বাইয়ের পোওয়াইয়ে নিজের স্টুডিওতে অডিশনের নামে শিশুদের নিয়ে গিয়েছিলেন জিম্মিকারী রোহিত আর্য। পরে সেখানে তিনি শিশুদের জিম্মি করেন। এই ঘটনায় মুম্বাই পুলিশ নিখুঁত অভিযান চালিয়ে শিশুদের উদ্ধার করেছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে রোহিত আর্য আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পুলিশ বলেছে, উদ্ধার অভিযান পরিচালনার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে এয়ারগান থেকে গুলি চালান রোহিত। জবাবে পুলিশ এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে আহত হন তিনি। পরে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 
পুলিশ বলছে, নাটকীয় এই জিম্মিদশার ঘটনা ঘটেছে পোওয়াই এলাকার ‘আরএ স্টুডিও’ নামের একটি ছোট ফিল্ম স্টুডিওতে। আর্য ওই স্টুডিওতে অডিশনের কথা বলে একদল শিশুকে ডেকে নিয়ে জিম্মি করেন।
মুম্বাই পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী এসব শিশুকে কয়েক ঘণ্টা ধরে জিম্মি করে রাখা হয়। তবে সবাইকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এনডিটিভি বলেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে ২টার দিকে শিশুদের জিম্মিদশার খবর পায় পুলিশ। পরে পোওয়াই থানা পুলিশের একটি দল তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর শিশুদের উদ্ধারের জন্য রোহিতের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা শুরু করে পুলিশ। কিন্তু তিনি শিশুদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এক পর্যায়ে শিশুদের হত্যার হুমকি দেন রোহিত আর্য। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পোওয়াই থানা পুলিশের সদস্যরা স্টুডিওর বাথরুম দিয়ে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ১৭ শিশুকে নিরাপদে উদ্ধার করে। এই ঘটনার আগে রোহিত একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, আত্মহত্যা না করে তিনি জিম্মিদশা তৈরির পথ বেছে নিয়েছেন।
ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘‘আমি রোহিত আর্য। আত্মহত্যা করার বদলে আমি একটি পরিকল্পনা করেছি। এখানে কিছু শিশুকে জিম্মি করেছি। তিনি বলেন, তার কিছু সহজ দাবি, নৈতিক দাবি এবং কিছু প্রশ্ন আছে। সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আপনাদের সামান্য ভুল পদক্ষেপই আমাকে উত্তেজিত করবে। তিনি ওই কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেবেন বলেও হুমকি দেন।
রোহিত বলেন, তার অর্থের দাবি নেই এবং তিনি সন্ত্রাসী নন। ভিডিওতে তিনি বলেন, আমি কেবল আলোচনা করতে চাই, তাই এই শিশুদের জিম্মি করেছি। এটা আমার পরিকল্পনার অংশ। বেঁচে থাকলে আমি এটা করব। আমি মারা গেলে অন্য কেউ করবে। কিন্তু এটা হবেই। কারণ আপনাদের সামান্য ভুল পদক্ষেপেই আমি এই জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেব এবং এতে মারা যাব।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক ও রাসায়নিক ভর্তি কয়েকটি পাত্র উদ্ধার করেছে; যা দিয়ে তিনি পুলিশকে ভয় দেখাতেন বলে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন। শিশুরা আরএ স্টুডিওতে একটি ওয়েব সিরিজের অডিশনে অংশ নিতে গিয়েছিল। ওই স্টুডিওটি একটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় অবস্থিত।
রোহিত আর্য বলেছিলেন, রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তর তার একটি প্রকল্পের পাওনা পরিশোধ করেনি। তিনি ‘পিএলসি স্যানিটেশন মনিটর প্রজেক্ট’র নামে একটি কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘মাই স্কুল, বিউটিফুল স্কুল’ কর্মসূচিতে কাজ করেছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে শুরু হওয়া তার ‘লেটস চেঞ্জ’ প্রচারণার মাধ্যমে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্নতার দূত বানানোর কাজ করছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই কাজের জন্য শিক্ষা দপ্তর তার নামে ২ কোটি রুপি অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।
ওই বছর তিনি দু’বার অনশন ধর্মঘটে বসেছিলেন এবং অভিযোগ করেছিলেন, তাকে কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপক কেশরকর ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কেশরকর তাকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা হিসেবে ৭ লাখ ও ৮ লাখ রুপির দু’টি চেক দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আরও অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। 
সূত্র: এনডিটিভি।

্রিন্ট

আরও সংবদ