খুলনা | শনিবার | ০১ নভেম্বর ২০২৫ | ১৭ কার্তিক ১৪৩২

চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব চিনবেন কিভাবে?

জয়া মাহবুব |
১২:৪৭ এ.এম | ০১ নভেম্বর ২০২৫


বন্ধুত্ব হলো জীবনের অন্যতম মূল্যবান উপহার। তবে সব বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হয় না। কেউ আমাদের জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসে, আবার কেউ থাকে বছরের পর বছর, উত্থান-পতনের মুহূর্তে। সিজনাল (অল্প সময়ের) এবং লাইফটাইম (চিরকালীন) বন্ধুর পার্থক্য বোঝা আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।
সিজনাল বন্ধুরা সাধারণত জীবনের নির্দিষ্ট পর্যায়ে উপস্থিত হন। তারা হতে পারেন সহকর্মী বা ছাত্রজীবনের বন্ধু। এদের সঙ্গে সম্পর্কটি প্রায়শই নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের সাথে সীমাবদ্ধ থাকে। ধরুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আপনি এমন কিছু ক্লাসমেটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন যাদের সাথে পড়াশোনা, ছোট ছোট সাফল্যের উদযাপন-সব কিছু একসাথে করেন। কিন্তু স্নাতকোত্তর শেষে জীবন আপনাকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। যোগাযোগ হ্রাস পায়, এবং সম্পর্ক ধীরে ধীরে দূরত্বে চলে যায়।
লাইফটাইম বন্ধুরা অন্যরকম। তারা কেবল আনন্দের সময় নয়, জীবনের ঝড়ে-ঝঞ্ঝার সময়ও পাশে থাকে। এই বন্ধুরা আপনার অতীত, খুঁতখুঁতে অভ্যাস, এবং ভয় বোঝে। যেমন, শিশুকাল থেকে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে , দেখা যায় আজও তারা বিভিন্ন শহরে থাকলেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, জীবনের সাফল্য উদযাপন করে এবং কঠিন সময়ে একে অপরকে সমর্থন দেয়। লাইফটাইম বন্ধুরা ধারাবাহিক, নির্ভরযোগ্য এবং আবেগগতভাবে সম্পৃক্ত।
কখনও কখনও এই পার্থক্য বোঝা সহজ-সঙ্কটের সময় বন্ধুর প্রতিক্রিয়া দেখলেই বোঝা যায়। সিজনাল বন্ধুরা দূর থেকে সহমর্মিতা দেখায়, কিন্তু লাইফটাইম বন্ধুরা বাস্তব জীবনে সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করে । মনে করুন, আপনার চাকরি চলে গেছে তখন আপনার কিছু বন্ধু তখন আপনাকে দূর থেকে সহমর্মিতা দেখালো , কিন্তু আপনার দীর্ঘদিনের বন্ধু হয়তো আপনার পরিস্থিতির কথা শুনে রিজিউমি আপডেট করতে সাহায্য করল, চাকরির লিঙ্ক দিল, এবং কঠিন সময়ে উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকল।
তবে দুই ধরনের বন্ধুত্বই গুরুত্বপূর্ণ। সিজনাল বন্ধুরা জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা, উচ্ছ¡াস এবং নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে আসে। লাইফটাইম বন্ধুরা স্থায়িত্ব, বিশ্বাস এবং আবেগগত সমর্থন দেয়। কোন বন্ধু কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে তা বোঝা আমাদের প্রত্যেক বন্ধুর মূল্য বোঝার সুযোগ দেয়। অনেক সময় বন্ধুত্ব ধরণ বুঝতে না পেরে আমরা সিজনাল বন্ধু যখন হারিয়ে ফেলি তখন মানসিকভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু যখন আমরা একটি বন্ধুত্বের ডাইনামিক্স বুঝতে পারবো তখন এরকম বন্ধুত্ব হারিয়ে গেলেও আমরা হতাশ হবো না।
লাইফটাইম বন্ধুত্বের যতœ নিতে হলে সচেতন প্রচেষ্টা প্রয়োজন-যোগাযোগ রাখা, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপস্থিত থাকা, এবং সমর্থন দেওয়া। সিজনাল বন্ধুত্বকে স্থায়ী সম্পর্কের চাপ ছাড়াই গ্রহণ করতে শিখতে হবে।
বন্ধুত্বের স্থায়িত্বের ভিন্নতা আমাদের শেখায়, প্রতিটি সম্পর্ককে তার নিজস্ব সময় ও ভূমিকা অনুযায়ী মর্যাদা দিতে। কেউ হয়তো ক্ষণিকের বন্ধুত্ব নিয়ে আসে, কেউ পুরো জীবন আলোকিত করে। আমাদের জীবনের সঠিক মূল্যবান বন্ধুগুলোকে চিনতে শিখতে হবে।
আমরা অনেক সময় কাউকে লাইফটাইম বন্ধু ভেবে নিই, অথচ তার চোখে আমরা হয়তো কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ের বন্ধু। তাই সম্পর্ককে বোঝা জরুরি-কোন বন্ধুত্ব আসবে ঋতুর মতো, আবার কেউ থেকে যাবে ছায়ার মতো। চিরস্থায়ী বন্ধুকে কাছে রেখে সম্পর্ককে আরও মজবুত করুন। শেষ পর্যন্ত, আসল বন্ধুত্ব সেই বন্ধুত্ব, যা সময়ের বিচারে নয়, হৃদয়ের বিচারে স্থায়ী।

্রিন্ট

আরও সংবদ