খুলনা | শনিবার | ০১ নভেম্বর ২০২৫ | ১৭ কার্তিক ১৪৩২

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা দয়া করে জাতীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না : মির্জা ফখরুল

‘বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় সনদে সই করলাম তারা বিশ্বাসঘাতকতা করলো’

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৮ এ.এম | ০১ নভেম্বর ২০২৫


একটি মহল আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহলটির উদ্দেশ্যে বিএনপি’র এ নেতা বলেছেন, তারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, এখন জনগণ যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়, তারা যেন সেই নির্বাচনের বিরোধিতা না করে। 
বিএনপি সংস্কারের পক্ষে এবং সেজন্য বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলটি জুলাই সনদে সই করেছে। কিন্তু  সরকার এবং ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। বর্তমান সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন তিনি।  
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলছি যে, আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই এবং আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা নির্বাচন চাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিন গণভোট হবে, সে কথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। সেখানে দু’টো ব্যালট থাকবে একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। সুতরাং, এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত কেউ করবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।’
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যারা এ নিয়ে গোলমাল করছেন, রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের অনুরোধ করব, জনগণকে অনেক বিভ্রান্ত করে অনেক কিছু করেছেন। সেগুলো আমি বলতে চাই না। একসময় এই দেশের সব মানুষের চাহিদা ছিল পাকিস্তান স্বাধীন (হোক), আপনারা সেটার বিরোধিতা করেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। আজকে দয়া করে জনগণ যে নির্বাচন চায়, সে নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এ দেশের মানুষ যারা বিট্রেয়ার (বিশ্বাসঘাতক), তাদের ক্ষমা করে না, তারা ক্ষমা পায় না। সুতরাং, এখান থেকে সরে আসুন, নির্বাচন করুন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই আমরা সকলে চাই।’
অন্তর্র্বর্তী সরকারকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, ‘যেদিন ঐকমত্যের নথি জমা দেওয়া হলো, মনে আছে, সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল ১৭ তারিখ। তার আগে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ঠিকঠাক করে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরে সেখানে স্বাক্ষর করলাম। কিন্তু  যখন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটা উপস্থাপন করা হলো, তখন দেখা গেল অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে আমরা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। তাই আমরা বলেছি, ‘ইটস অ্যা ব্রিচ অব ট্রাস্ট’। অথচ তারা সেই আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। আমরা যে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করেছিলাম, তারা তা রাখেনি। তাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায় অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের।’
বিএনপি সংস্কারের পক্ষে জানিয়ে মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি সংস্কারের দল। বিএনপি’র জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তখন সব পত্রিকা বন্ধ ছিল, তিনি সেগুলো খুলে দিয়েছিলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, সবই শুরু করেছিলেন শহীদ জিয়া। পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থা থেকে পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে ফিরে আসেন। আমরা প্রথমে তা না মানলেও, তিনিই নির্বাচন করে মেজরিটি নিয়ে এসে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই ব্যবস্থার অধীনে চারটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যারা বলে বিএনপি সংস্কার চায় না, তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। বিএনপি সব সময় সংস্কারের পক্ষে। আগে ১০ দফা, পরে ২৭ দফা, এরপর ৩১ দফা দিয়েছে, সবই সংস্কারের জন্য। আমরা প্রত্যেকটি সভায় উপস্থিত থেকেছি, আলোচনা করেছি, শেষ পর্যন্ত ঐক্যমতের সনদে সই করেছি। বিভ্রান্তি যদি আসে, সেটা ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে।’
বিএনপি’র পরিকল্পনা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চাই। যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়েছি, একসঙ্গে কাজ করেছি, তাদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট আসুন, সবাই মিলে নির্বাচনের সুযোগকে কাজে লাগাই। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করে জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করি।’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য অন্তর্র্বর্তী সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের আগে কোনো গণভোটের সুযোগ নেই। নির্বাচনের দিনই জনগণ দু’টি ব্যালটে ভোট দেবে- একটি প্রার্থী নির্বাচনের জন্য, আরেকটি গণভোটের জন্য।  তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ঐকমত্যের চূড়ান্ত নথিতে বিএনপি’র মতভেদ বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ গোপন করে আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দায় সম্পূর্ণভাবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার যে কমিশন গঠন করেছে, সেই কমিশন প্রায় এক বছর আট-নয় মাস ধরে ঐকমত্যের নানা বিষয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই একমত হয়েছিলাম। কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম। অর্থাৎ মতভেদ থাকলেও মূল বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এটাই ছিল নিয়ম।
ফখরুল বলেন, যখন আমরা নির্বাচনে যাবো, তখন সেই ঐকমত্যের বিষয়গুলো আমাদের ম্যানিফেস্টোতে থাকবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা পার্লামেন্টে তা পাস করে দেশের পরিবর্তন ঘটাবো। আর যদি ভোট না দেয়, তাহলে সেটি বাদ পড়বে।
সভায় আরও বক্তৃতা করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

্রিন্ট

আরও সংবদ