খুলনা | সোমবার | ০৩ নভেম্বর ২০২৫ | ১৮ কার্তিক ১৪৩২

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের বিকল্প নেই

|
১১:৪৭ পি.এম | ০১ নভেম্বর ২০২৫


দেশের রাজনীতি এক জটিল ঘূর্ণাবর্তে নিপতিত হয়েছে। জুলাই সনদ ও এর বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া এবং আলোচিত গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো স্পষ্টতই দুই ভাগ হয়ে গেছে। আল্টিমেটাম প্রদান ও শক্তি প্রদর্শন রাজনীতিকে সংঘাতপূর্ণ করে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে আগামী ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে যেমন সংশয় তৈরি হয়েছে, তেমনি দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদনসহ একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজনে একদিকে রয়েছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এবং বাম দলগুলোসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল; অন্যদিকে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আটটি দল-উপদল। জামায়াতে ইসলামী বলছে, গণভোট হতে হবে নভেম্বরের মধ্যে। গণভোটের তারিখ ঘোষণার জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে গত শুক্রবার পর্যন্ত সময় দিয়ে রেখেছিল।
অপরদিকে বিএনপি বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠানকে বিএনপি কোনোভাবেই মেনে নেবে না। বাম দলগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশসহ সার্বিক পরিস্থিতি দেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছেন, গণভোট কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন। রাজনীতির  বিরোধপূর্ণ এই ঘূর্ণাবর্তের কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষিত সময়ের মধ্যে হবে কি না, তা নিয়েই জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সা¤প্রতিক বক্তব্য এই জল্পনা-কল্পনার মাত্রা আরো বাড়িয়েছে বলে অনেকে মনে করছে। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা তাঁর রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বলেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। অবশ্য তিনি এ কথাও বলেন, ‘যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক, আমাদের সেটা অতিক্রম করতেই হবে।’
‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপেশে এবং জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। তিনি বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারির এখতিয়ার বর্তমান সরকারের নেই। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলে দিয়েছে, সংসদ নির্বাচন ঠিক সময়ে না হলেও নভেম্বরেই গণভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। দলটি শুক্রবারের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি জানায়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবকে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। পরিস্থিতি জটিল করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী। জাতি আজ এক ক্রান্তিকালে রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ সময়ে জাতীয় ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো বিকল্প নেই।

্রিন্ট

আরও সংবদ