খুলনা | রবিবার | ০২ নভেম্বর ২০২৫ | ১৮ কার্তিক ১৪৩২

নতুন ঠিকানায় ১০০ বন্দি, রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুলে বরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৯ এ.এম | ০২ নভেম্বর ২০২৫

খুলনার পুরাতন কারাগার থেকে নতুন ঠিকানায় গেলেন ১০০ বন্দি। শনিবার বেলা ১১টায় তিনটি প্রিজন ভ্যানে করে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে (পুরুষ) খুলনার আধুনিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন কারাগারে গেলে রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল দিয়ে বন্দিদের বরণ করে নেন কারা উপ-মহাপরিদর্শক মনির আহমেদ। এ সময় খুলনা জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, জেলার মুনীর হোসাইনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে বন্দির সংখ্যা বাড়ানো হবে। দীর্ঘ ১৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলনায় শুরু হলো নতুন অধ্যায় একটি আধুনিক, মানবিক ও সংশোধন নির্ভর কারা ব্যবস্থার যাত্রা।
সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে বন্দিদের নতুন ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল গত শনিবার (২৫ অক্টোবর)। কিন্তু খুলনার নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় এই কার্যক্রম এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। এরই মধ্যে মাটি ভরাটের কিছু কাজ হলেও পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি।
খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, ‘আজ (গতকাল শনিবার) নতুন কারাগারে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও বন্দি সেখানে নেওয়া হবে। এ ছাড়া যশোর জেল থেকেও কিছু সাজাপ্রাপ্ত বন্দি নতুন কারাগারে আনা হবে। ফলে খুলনা ও যশোরের কারাগার কিছুটা চাপমুক্ত হবে।’
কারা সূত্র জানায়, নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলেও পুরোনো (বর্তমান) কারাগারেও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে নতুন কারাগারটি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বর্তমান জেলখানা ঘাট এলাকায় থাকা কারাগারটি মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
খুলনায় দু’টি কারাগার চলমান রাখার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির এটি গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হলে পৃথক নামে দু’টি কারাগার আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সূত্রটি আরও জানায়, কার্যক্রম শুরু হলে দুই কারাগারে জেল সুপার ও জেলার আলাদাভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এখন বর্তমান কর্মকর্তারা দু’টি কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন।
কারা সূত্র জানায়, খুলনায় পুরাতন ও নতুন দু’টি কারাগার পরিচালনায় মোট ছয়শ’ জন জনবল প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে ২০৮জন। স¤প্রতি নতুন করে আরও ৪৪ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। সীমিত জনবল নিয়েই আপাতত দু’টি কারাগার পরিচালনা করা হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরাতন কারাগারে রাখা হবে খুলনা মহানগরের বন্দিদের এবং নতুন কারাগারে জেলার নয় উপজেলার বন্দিদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ভৈরব নদের তীরে ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি আছেন। সেখানে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দীদের। তাই খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত¡াবধানে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। তবে আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
২০১১ সালে খুলনা সিটি বাইপাস সড়কের পাশে প্রায় ৩০ একর জায়গাজুড়ে শুরু হয় নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্প। এর আগে নতুন কারাগার নির্মাণের প্রকল্প ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ১৪৪ কোটি টাকা। স্থান নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। এরপর ২০১৭ সালে প্রকল্প সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা এবং কাজ শেষের লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুন। কিন্তু তা আর হয়নি। ২০২৩ সালে ফের প্রকল্প সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে হয় ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সময় বাড়ানো হয় আটবার।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই কারাগার নির্মাণ করা  হয়েছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্ক শেড থাকছে। একই ভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল গ্রন্থাগার, খাবারের কক্ষ, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এই ওয়ার্ডে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্ক শেড, বিনোদনকেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।
কারা সূত্র জানায়, বন্দীদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানা প্রাচীর রয়েছে। একশ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দীর সঙ্গে মেশার সুযোগ নেই। ভেতরে শুধু প্রাচীর রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া ড্রেন, ফুটপাত, পয়োবর্জ্য শোধনকেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, দু’টি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাটি ভরাটের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ ছাড়াও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।
খুলনায় চালু হলো আধুনিক জেলা কারাগার। শনিবার সকালে পুরাতন কারাগার থেকে ১০০ কয়েদিকে এনে আধুনিক কারাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
খুলনা জেল সুপার মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, প্রথম পর্যায়ে পুরাতন কারাগার থেকে ১০০ বন্দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে। 
উপ-মহা কারা পরিদর্শক মনির আহমেদ কারাগারের ফটকে ফুল দিয়ে বন্দিদের স্বাগত জানান। বর্তমানে নতুন কারাগারটির ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার। ভবিষ্যতে আরও ২ হাজার বন্দির জন্য নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। 
নতুন এই কারাগারটি নির্মিত হয়েছে আধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য পৃথক ভবন, নারী, কিশোর ও কিশোরীদের জন্য আলাদা ব্যারাক, হাসপাতাল, ওয়ার্ক শেড ও মোটিভেশন সেন্টারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বন্দিদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, আর কারারক্ষীদের পরিবারের জন্য নির্মিত হয়েছে স্কুল, ডাইনিং, লাইব্রেরি, সেলুন ও লন্ড্রি। শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্যও রয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার, যেখানে সাধারণ বন্দিদের প্রবেশাধিকার থাকবে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ